বর্তমানে একটি সম্ভামনাময় খাত হলো বাণিজ্যিকভাবে কোয়েল পালন
বাণিজ্যিক কোয়েল গুলোকে তিনভাগে ভাগ করা যেতে পারে৷ যেমন–
- লেয়ার কোয়েল (Layer quail)
- ব্রয়লার কোয়েল (Broil quail)
- ব্রিডার কোয়েল (Breeder quail)
## লেয়ার_কোয়েলঃ
লেয়ার কোয়েল খামারে ডিম উৎপাদনের জন্য পালন করা হয়৷ সাধারণত ৬-৭ সপ্তাহ বয়স থেকে জাপানী কোয়েলী ডিমপাড়া শুরু করে৷ ব্যবস্থাপনা সঠিক হলে প্রতিটি জাপানী কোয়েলী বছরে ২৫০-৩০০টি এবং ববহোয়াইট কোয়েলী ১৫০-২০০টি ডিম পেড়ে থাকে৷
## ব্রয়লার_কোয়েলঃ
নরম ও সুস্বাদু মাংস উৎপাদনের জন্য কোয়েলী নির্বিশেষে কোয়েলগুলোকে ব্রয়লার কোয়েল বলা যায়৷ মাংস উৎপাদনের জন্য জন্মের দিন থেকে পাঁচ সপ্তাহ বয়স পর্যন্ত এবং ববহোয়াইট কোয়েলকে ৮ সপ্তাহ বয়স পর্যন্ত পালন করা হয়৷ এ সময়ের মধ্যে জীবিতাবস্থায় একেকটি পাখির ওজন হয় ১৪০-১৫০ গ্রাম এবং এতে প্রায় ৭২.৫% খাওয়ার উপযোগী মাংস পাওয়া যায়।
## ব্রিডার_কোয়েলঃ
লেয়ার, ব্রয়লার ও শোভাবর্ধনকারী কোয়েলের বাচ্চা ফোটানোর লক্ষ্যে ডিম উৎপাদনের জন্য ব্যবহৃত বাছাই করা প্রজননক্ষম কোয়েল ও কোয়েলীকে ব্রিডার কোয়েল বলা হয়৷ সাধারণত ৭-৮ সপ্তাহ বয়সের জাপানী কোয়েলী ও ১০ সপ্তাহ বয়সের কোয়েল ব্রিডিং খামারে এনে পালন করা হয়৷
কোয়েল-কোয়েলীগুলোকে ব্রিডিং খামারে ৩০ সপ্তাহ বয়স পর্যন্ত রাখা হয়৷ ববহোয়াইট কোয়েল ৮-১০ সপ্তাহ বয়সে প্রজননক্ষম হয়৷ প্রজননের জন্য কোয়েল ও কোয়েলীর অনুপাত ১:১ অর্থাৎ এদের জোড়ায় পালন করতে হয়৷
যেহেতু পোল্ট্রি শিল্পে বা বর্তমান সময়ে বাণিজ্যিক কোয়েলের গুরুত্বই বেশী তাই এখানে মূলত বাণিজ্যিক কোয়েল সম্পর্কেই আলোচনা করা হয়েছে৷
## বাণিজ্যিক_কোয়েল_পালন_পদ্ধতি:
আধুনিক পদ্ধতিতে খামার ভিত্তিক কোয়েল পালন করতে পর্যাপ্ত বাসস্থান প্রয়োজন৷ বাংলাদেশের বেশীরভাগ এলাকা উষ্ণ ও আর্দ্র হওয়ায় উন্মুক্ত গৃহায়ন (Open housing) পদ্ধতিই বেশী প্রচলিত৷ কোয়েল পালনের উদ্দেশ্য ও বয়সভেদে বিভিন্ন ধরণের ঘরের প্রয়োজন হয়৷ কোয়েল সাধারণত লিটার এবং খাঁচা দুই পদ্ধতিতে পালন করা যায় হয়৷
## খামারের_জন্য_স্থান_নির্বাচনঃ
কোয়েলের খামার বা কোয়েলারি (Quailary) গড়তে হলে প্রথমেই আসবে স্থান নির্বাচন৷ কোয়েলারি /খামার এমন জায়গায় স্থাপন করতে হবে যেখানে নিম্নলিখিত সুবিধাগুলো অবশ্যই থাকবে।যেমন-
১. যানবাহন চলাচল ও যাতায়াতের সুবিধা৷
২. আশেপাশে কোন শহর বা বাজার থাকার সুবিধা৷
৩. পানি ও বিদ্যুৎ সরবরাহের সুবিধা৷
৪. কোলাহলমুক্ত ও নির্ঝঞ্ছাট পরিবেশ৷
৫. বন্যা ও প্রাকৃতিক দুর্যোগমুক্ত স্থান৷
৬. বিপণন সুবিধা৷
৭. ভবিষ্যৎ খামার সম্প্রাসারণ সুবিধা৷
৮. দূষিত গ্যাস নির্গমনকারী যেকোন শিল্প প্রতিষ্ঠান থেকে দূরে হতে হবে৷
৯. বর্জ্য নিষ্কাষন ও ড্রেনের ব্যবস্থা থাকতে হবে৷
## কোয়েলের_ঘর_নির্মাণঃ
কোয়েলের ঘর নির্মাণের ক্ষেত্রে নিম্নলিখিত বিষয়গুলোর প্রতি খেয়াল রাখতে হবে৷যেমন–
১. পাখিদের জন্য আরামদায়ক পরিবেশ নিশ্চিত করা৷
২. প্রাকৃতিক আলো-বাতাস নিশ্চিত করা ও প্রয়োজন মতো তা নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা রাখা৷
৩. অতিরিক্ত শীত, গরম বা বৃষ্টি ও স্যাঁতসেঁতে অবস্থা থেকে পাখিদের রক্ষা করা৷
৪. নির্দিষ্ট দূরত্বে ও প্রয়োজনীয় আকারের ঘর নির্মাণ করা৷
৫. বিভিন্ন বয়সের কোয়েলের জন্য পৃথক ঘরের ব্যবস্থা করা৷
৬. ইঁদুর ও অন্যান্য ক্ষতিকারক জন্তুর হাত থেকে এদের রক্ষা করা৷
৭. রোগ-জীবাণুর প্রবেশ নিয়ন্ত্রণ করা৷
৮. খামারে পাখির মল-মূত্রের কারণে যে কোন দুর্গন্ধ না হয়, সেজন্য আগে থেকেই সঠিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা৷
#ঘরের_প্রকারভেদঃ
কোয়েল পালনের উদ্দেশ্যের উপর ভিত্তি করে এদের ঘর বিভিন্ন প্রকার হতে পারে,যেমন–
কোয়েলের খামার বা কোয়েলারি (Quailary) গড়তে হলে প্রথমেই আসবে
#স্থান_নির্বাচন৷ কোয়েলারি /খামার এমন জায়গায় স্থাপন করতে হবে যেখানে নিম্নলিখিত সুবিধাগুলো অবশ্যই থাকবে।যেমন-
১. হ্যাচারী ঘর (Hatchery) : এ ধরনের ঘরে ডিম থেকে বাচ্চা ফুটানো হয়৷
২. ব্রডার ঘর (Brooder House) : এখানে সদ্য ফোটা বাচ্চাদের জন্মের পর থেকে ২/৩ (বা অবস্থাভেদে ৩-৪) সপ্তাহ বয়স পর্যন্ত কৃত্রিমভাবে তাপ প্রদানের মাধ্যমে পালন করা হয়৷
৩. গ্রোয়ার ঘর (Grower house) : এখানে ৩-৫ সপ্তাহ বয়স পর্যন্ত বাচ্চা কোয়েলকে পালন করা হয়৷
৪. ডিম পাড়া ঘর (Layer House) : এখানে ৬-৬০ সপ্তাহ বয়স পর্যন্ত ডিম উৎপাদনকারী কোয়েলগুলোকে পালন করা হয়৷
৫. ব্রয়লার ঘর (Broiler House) : এখানে একদিন থেকে ৫ সপ্তাহ বয়স পর্যন্ত মাংস উৎপাদনকারী কোয়েলগুলোকে পালন করা হয়৷
## ঘরের লে-আউট/ডিজাইন:
সমতল ভূমিতে কোয়েলের ঘর পূর্ব-পশ্চিমে লম্বা ও পূর্ব বা দক্ষিণমূখী হওয়া উচিত৷ অন্যদিকে, পাহাড়ী এলাকায় কখনোই একেবারে চূড়ায় বা চূড়ার কাছাকাছি এবং সামুদ্রিক এলাকায় সমুদ্রের পাড়ে খামার তৈরি করা উচিত নয়৷
#আকার (Size) : কোয়েল পালনের জন্য আয়তকার ঘর সবচেয়ে উপযোগী৷ লিটার পদ্ধতিতে কোয়েল পালন করা হলে ঘর অবশ্যই ছোট হওয়া বাঞ্ছনীয়৷ খাঁচা বা ব্যাটারী (Battery) পদ্ধতির ক্ষেত্রে ঘরের আকার ছোট কিংবা বড় হলেও অসুবিধা নেই৷ ঘরের দৈর্ঘ্য যাই হোক না কেন প্রস্থ ৪.৫-৯.০ মিটার হওয়া উচিত৷ সঠিক বায়ু চলাচলের জন্য প্রস্থ ৯.০ মিটারের বেশী হওয়া বাঞ্ছনীয় নয়৷
#ছাদ (Roof) : ছাদের ডিজাইন সাধারণ ঘরের প্রস্থ, খামার এলাকার অবস্থা, গৃহায়নের ধরন ইত্যাদির উপর নির্ভর করে৷ ছাদের ডিজাইন বেশ কয়েক ধরণের হতে পারে৷ যেমন- (১) শেড টাইপ (Shed type), (২) গ্যাবল টাইপ (Gable type), (৩) প্যাগোডা টাইপ (Pagoda type) ইত্যাদি৷ ছাদ তৈরিতে ঢেউটিন, অ্যাসবেস্টোস, খড় ইত্যাদি ব্যবহার করা যেতে পারে৷
#দেয়াল (Wall) : ঘরের দু’পাশের দেয়াল ২.৫-৩.০ মিটার উঁচু হবে৷ দেয়ালের নিচের অংশ (২.৫-৩.০ মিটার পর্যন্ত) ইট বা নিরেট (solid) কোন বস্তু দিয়ে তৈরি করতে হবে৷ অ্যাঙ্গেল লোহা বা লোহার পাইপের উপর শক্ত তারজালি দিয়ে দেয়ালের উপরের অংশ তৈরি করা যায়৷
#মেঝে (Floor) : ঘরের মেঝে মাটির লেভেল থেকে অন্তত তিন মিটার উঁচু হওয়া উচিত৷ সিমেন্ট ও কংক্রীট দিয়ে তৈরি পাকা মেঝে সবচেয়ে ভাল৷
#দরজা (Door) : ঘরের কমপক্ষে দু’টি দরজা থাকবে, সেগুলো ১.২ মিটার চওড়া ও ২.০ মিটার উঁচু হবে৷ দরজা অবশ্যই কাজের পথের (Service rood/working pathway) সঙ্গে সংযুক্ত থাকবে, যাতে অনায়াসে খামার ও অন্যান্য দ্রব্য সামগ্রী আনা-নেয়া করা যায়৷
#বায়ু_চলাচল_ব্যবস্থা (Ventilation) : আধা উন্মুক্ত ঘরে প্রাকৃতিক পদ্ধতিতে বায়ু চলাচল করে৷ ঘর ছোট হলে দেয়ালের শেষ প্রান্তে একটি এগজস্ট পাখা (Exhaust fan) এবং বড় হলে প্রয়োজন অনুযায়ী একাধিক পাখা এমনভাবে স্থাপন করতে হবে যেন বাতাস ঘরের ঠিক মাঝখানে আসে৷
#লাইট (Light) : কোয়েলের ঘরে বৈদ্যুতিক বাল্বের পয়েন্টগুলো মেঝে থেকে অন্তত ২.০ মিটার উঁচুতে হবে৷ লক্ষ্য রাখতে হবে যেন এগুলো ঢিলা হয়ে ঝুলে না থাকে৷