Header Ads

Header ADS

কোয়েল পাখি পালন পদ্ধতি সম্পর্কে জানা-অজানা অনেক তথ্য



বর্তমানে আমাদের দেশে খামার পর্যায়ে যত রকমের পোল্ট্রি প্রজাতি রয়েছে তার মধ্যে সবচেয়ে ঝুঁকিমুক্ত হচ্ছে কোয়েল পাখির খামার।আগে বনে-বাদারে ঘুরে বেড়ালেও বর্তমানে বিশ্বের অনেক দেশেই বানিজ্যিকভাবে চাষ করা হচ্ছে কোয়েল পাখি।

আমাদের দেশের আবহাওয়া কোয়েল পালনের জন্য বেশ উপযুক্ত।১১ টি পোল্ট্রি প্রজাতির মধ্য ক্ষুদ্র এই প্রজাতিটি বিশেষ স্থান দখল করে আছে শুধুমাত্র তার অধিক উৎপাদনশীলতার জন্য।

কোয়েলের আদি জন্মস্থান জাপানে। সর্বপ্রথম জাপানী বিজ্ঞানীরা কোয়েলকে গৃহপালিত পাখি হিসেবে পোষ মানানোর উপায় উদ্ভাবন করেছেন। পরবর্তীতে জাপান সহ পৃথিবীর অন্যান্য দেশে কোয়েলকে একটি লাভজনক পোল্ট্রী উপাদান হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।

ব্রয়লার শিল্পে ক্রমাগত ধস,উচ্চমূল্যের বাচ্চা,রোগের প্রকোপ আর খামারি পর্যায়ে নিম্নমূল্যের পাওয়ার কারনে এখন আমাদের দেশের অনেকেই ঝুঁকছেন কোয়েল খামারের দিকে।এই তালিকায় বেশিরভাগ রয়েছেন শিক্ষিত বেকার যুবক ও বিদেশ ফেরত প্রবাসী বাংলাদেশিরা।

তবে না জেনে-শুনে হুটহাট করে খামার করে অনেকেই পড়ছেন বিপাকে।

তাই খামার করার আগে প্রয়োজন সঠিক পরামর্শ,প্রশিক্ষণ আর জেনে বুঝে কাজে হাত দেয়া।

এই বইটি পড়ার পরে হয়ত আপনি একটা সদ্ধান্ত নিতে পারবেন-আদৌ আপনার দ্বারা কোয়েল খামার করা সম্ভব কিনা?


## কোয়েলের জাতঃ

প্রথমেই বলে নিই,আমাদের বাংলাদেশে কোয়েলের জাত-পাতের বালাই নাই।নির্দিষ্ট কোনো ব্রিডিং প্ল্যান না থাকায় আর ব্যক্তি পর্যায়ে যে যার মত করে ব্রিডিং করার কারণে কোয়েলের জাত হয়ে গেছে এখন পাঁচমিশালি।

তবুও আমাদের দেশে প্রাপ্ত কোয়েলকে আমরা জাপানিজ কোয়েল বলেই চিনে থাকি। কারণ, জাপানেই কোয়েলকে সর্বপ্রথম গৃহপালিত করা হয়েছে। জাপানের হিসেব অনুযায়ী কোয়েলের কয়েকটি জাত এবং উপাজত রয়েছে, সেগুলো নিচে দেয়া হলঃ

লেয়ার জাতের কোয়েলঃ মুরগির মতো কোয়েলের মধ্যেও লেয়ার জাত বিদ্যমান। এই জাতের উল্লেখযোগ্য গোষ্ঠী হলো-

কমন জাপানিজ লেয়ার কোয়েল

ফারাও

ইংলিশ হোয়াই

ম্যানচিরিয়াল গোল্ডেন

ব্রিটিশ রেঞ্জ ইত্যাদি।

এই জাতের কোয়েলকে শুধু ডিম প্রদানের জন্য পালন করা হয়ে থাকে।

Japanese Quail

ব্রয়লার জাতের কোয়েলঃ মুরগির মতো কোয়েলের মধ্যে ব্রয়লার জাত বিদ্যমান এই জাতের উল্লেখযোগ্য গোষ্টি হলো-

জায়ান্ট জর্জিয়া বব হোয়াইট কোয়েল-এ জাতের কোয়েল প্রায় ৪৫০ থেকে ৫০০ গ্রাম ওজন হয়ে থাকে।

আমেরিকান বব হোয়াইট কোয়েল

ইন্ডিয়ান হোয়াইট ব্রেস্টেড কোয়েল ইত্যাদি।

এই জাতের কোয়েলকে শুধু মাংসের জন্য পালন করা হয়ে থাকে।

শুধুমাত্র জানার জন্য এই জাতগুলার নাম জেনে রাখুন। খুঁজতে গেলে বিপদে পড়বেন। কারণ আমাদের দেশে জাত-পাতের বালাই নেই -এটা আগেই বলে দিয়েছি।


## কেন কোয়েল পালন করবেন?

অন্যান্য পোল্ট্রির চেয়ে কোয়েল পালনের সুবিধা বেশি আর ঝুঁকি বলেই আপনি কোয়েল পালন করবেন।তো চলুন জেনে নেয়া যাক কোয়েল পালনের সুবিধাগুলো কি কি…?

কোয়েলের শারীরিক বৃদ্ধির হার বেশি।

৬-৭ সপ্তাহে বয়সে ডিমপাড়া শুরু করে।যদিও বাস্তবে আরো ৫-৭ দিন বেশি সময় লাগে।

বছরে গড়ে ২৫০-৩০০ টি ডিম পাড়ে ।

একটি মুরগীর জায়গায় ৮ টা কোয়েল পালন করা যায়।

১৭-১৮ দিনে ডিম ফুটে বাচ্চা বের হয়।

ডিমের পুষ্টিমান কোনো অংশে মুরগির ডিমের চেয়ে কম নয়।

কোয়েলের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা অনেক বেশি।সহজে রোগাক্রান্ত হয় না।

ডিমের উর্বরতার হার শতকরা ৮০-৯০ ভাগ।

অল্প পুঁজি বিনিয়োগ করে অল্প দিনে বেশী লাভ করা যায়।

ডিমে কোলেস্টেরল কম এবং প্রেটিনের ভাগ বেশি।

কোয়েলের দৈহিক ওজনের তুলনায় ডিমের শতকরা ওজন বেশী।

বাংলাদেশের আবহাওয়া কোয়েল পালনের উপযোগী।

কোয়েলের জন্য বিশেষ কোন খাবার সরবরাহ করতে হয় না। এদের খাদ্য চাহিদা কম অথচ, শারীরিক বাড় খুব বেশি। এরা খুব দ্রুত বাড়তে পারে। দিনে ২০ থেকে ২৫ গ্রাম খাবার দিলেই এরা এদের শারীরিক পুষ্টি চাহিদা পূরন করে নিতে পারে।


## কোয়েলের বাসস্থানঃ

কোয়েল পালনের জন্য যেহেতু অল্প জায়গার প্রয়োজন সেহেতু আপনি আপনার বসতবাড়ির আশেপাশে আর শহরে হলে বাসায় ছাদে কোয়েল খামার করতে পারেন।খামার যেখানেই করুন না কেন,জায়গাটা হতে হবে আলো বাতাস যুক্ত ও বন্যপ্রাণীদের নাগাল মুক্ত।

কোয়েল সাধারনত ২ ভাবে পালন করা যায়-

লিটার বা ফ্লোর পদ্ধতি

খাঁচা পদ্ধতি

## লিটার পদ্ধতিতে কোয়েল পালনঃ

এই পদ্ধতিতে সাধারনত কাঁচা মাটির উপরে বা পাকা ফ্লোরে লিটার অর্থাৎ শুকনো কাঠের গুড়ি (স”মিল এ পাওয়া যায়),ধানের তুষ বা চিটা অথবা বালি ৫-৬ ইঞ্চি পুরু করে বিছিয়ে দিয়ে তার উপরে কোয়েল পালন করা হয়।

## লিটার ব্যবস্থাপনাঃ

লিটারঃ পোল্ট্রির ঘরে শয্যা হিসেবে ব্যবহৃত বিভিন্ন বস্তুকে লিটার বলে৷ এক কথায় বাসস্থানকে আরামদায়ক করার জন্য কোয়েলের ঘরে যে বিছানা ব্যবহার করা হয় তাই লিটার।

লিটারের উপকরণঃ লিটার হিসেবে সাধারণত ধানের তুষ, করাতের গুঁড়া, ধান বা গমের শুকনো খড়ের টুকরো, কাঠের ছিলকা, বাদামের খোসার গুঁড়া ইত্যাদি ব্যবহার করা হয়৷ এগুলো এককভাবে ব্যবহার না করে সাধারণত কয়েকটি একসঙ্গে মিশিয়ে ব্যবহার করা ভাল।

লিটার প্রস্তুতঃ

শুরুতে ৩-৪ সে.মি. পুরু লিটার সামগ্রী পরিস্কার মেঝেতে ছড়িয়ে দিতে হবে৷

ধীরে ধীরে আরো লিটার সামগ্রী যোগ করে ৪-৫ সপ্তাহের মধ্যে এই পুরুত্ব ৬ সে.মি.-এ উন্নীত করতে হবে৷

ব্যাটারি ব্রুডারে পালিত বাচ্চার ক্ষেত্রে শুরুতেই ৬ সে.মি. পুরু লিটার ব্যবহার করতে হবে৷

স্বাস্থ্যসম্মত পরিবেশ নিশ্চিত করতে তাজা লিটার সামগ্রী বিছানোর পরপরই কোনো উৎকৃষ্টমানের ও কার্যকরী জীবাণুনাশক স্প্রে করতে হবে৷ তবে, বাচ্চা নামানোর ৭২ ঘন্টা পূর্বেই একাজ শেষ করতে হবে৷

লিটারের পরিচর্যাঃ

উৎকৃষ্ট লিটারের আর্দ্রতা সবসময় ২৫-৩০% হওয়া উচিত৷

অতিরিক্ত আর্দ্রতা দূর করার ব্যবস্থা করতে হবে৷

লিটারের স্বাস্থ্যসম্মত পরিবেশ রক্ষার জন্য ঘনঘন লিটার উল্টেপাল্টে দিতে হবে৷

ঘরে বায়ু চলাচলের পর্যাপ্ত ব্যবস্থা রাখতে হবে৷

বাতাসে আর্দ্রতা বেড়ে গেলে ৪-৫ কেজি/১০ ঘনমিটার জায়গা (ফ্লোর এরিয়া) হিসেবে লিটারে কলিচুন (স্ল্যাকড লাইম) যোগ করতে হবে৷

পানির পাত্রের চারদিকের ভেজা লিটার বদলে তাজা লিটার সামগ্রী দিতে হবে৷

অতিরিক্ত গরমে লিটারের আর্দ্রতা কমে গেলে স্প্রে’র মাধ্যমে পানি ছিটিয়ে আর্দ্রতা ঠিক রাখতে হবে৷


 ## লিটার পদ্ধতিতে কোয়েল পালনের সুবিধাঃ

প্রথমেই বলে নিই লিটার বা মেঝে পদ্ধতিতে কোয়েল পালনের সুবিধার চেয়ে অসুবিধাই বেশি।তবুও কিছু সুবিধা তো আছেই।যেমন-

লিটারের দ্রব্যাদি সহজলভ্য আর সস্তা

এই পদ্ধতিতে শুধুমাত্র ঘর তৈরি করেই মেঝেতে পাখি পালন করা যায়।তাই খরচ কম হয়।কিন্তু খাচা পদ্ধতিতে ঘর এবং খাচা দুটোই তৈরি করা লাগে তাই খরচ বেশি হয়।

কোনো পাখি রোগাক্রান্ত হলে বা কোনো সমস্যা দেখা দিলে সহজেই খামারের একপ্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে পাখি গুলা সহজেই পর্যবেক্ষণ করা যায়।


## লিটার পদ্ধতিতে কোয়েল পালনের অসুবিধাঃ

লিটার পদ্ধতিতে কোয়েল পালনের অসুবিধার কথা বলে শেষ করা যাবে না।তবুও কিছু না বলে আর থাকতে পারছি না।

এই পদ্ধতিতে ব্যবহৃত লিটার দ্রব্যাদি জমাট বেঁধে খামারে এমোনিয়া গ্যাস সৃষ্টি হয়।যা পাখির জন্য খুবই ক্ষতিকর।এতে পাখি মারা যেতে পারে এবং ডিমের উৎপাদন কমে যেতে পারে।

লিটার জমাট বেঁধে যায় বলে মাঝে মাঝেই লিটার উলট পালট করে দিতে হয়।যা কষ্টসাধ্য।

এই পদ্ধতিতে পাখি লিটার বা মেঝের উপরে ছড়িয়ে ছিটিয়ে ডিম পাড়ে ফলে ডিম সংগ্রহ করার কষ্টসাধ্য হয়ে পড়ে।

ডিম পেড়ে পাখির যদি দৌড়াদৌড়ি করে বা একটা আরেকটাকে তাড়া করে তবে লিটারে পড়ে থাকা ডিম ভেঙ্গে যায়।যা খামারের জন্য আর্থিক ক্ষতির কারন।

এছাড়া ঘরের মধ্যে ইঁদুর বা ছুঁচো ঢুকে ডিম বা পাখি খেয়ে ফেলতে পারে।

এই পদ্ধতিতে রোগ-জীবানু হওয়ার সম্ভাবনা বেশি।কারন পাখি লিটারের উপরেই পায়খানা করে এবং সেই পায়খানা থেকে রোগ-জীবানু সৃষ্টি হতে পারে।

লিটার নষ্ট হয়ে গেলে মাঝে মাঝে তা পরিবর্তন করে দিতে হয়।যা কষ্টসাধ্য এবং একই সাথে ব্যয়বহুল।

খাবার ও পানির পাত্র মেঝেতে একটা একটা করে সাজিয়ে দিতে হয়।তাই প্রতিদিন অনেক গুলা পাত্র বের করে পরিষ্কার করে আবার পানি ও খাবার ভরে সাজিয়ে দিতে হয়।এটা সময় সাপেক্ষ ও বেশি শ্রম লাগে।

লিটারের উপরে পড়ে থাকা পায়খানা বা মল পাখির পায়ের সাথে জড়িয়ে গিয়ে তার সাথে লিটার মানে গাছের গুড়ি বা তুষ মিশে পাখির পায়ে শক্ত গুটির মত সৃষ্ট হয়।ফলে পাখি হাটতে পারে না।যার কারনে খাবার ও পানি খেতে পারে না।পাখি শুকিয়ে যায় অবশেষে মারা যেতে পারে।

পাখির পালক পড়ে যায় সহজেই।

এছাড়া লিটারে পালন করলে কোয়েলের কৃমি রোগ হওয়ার সম্ভাবনা বেশি।


## খাঁচায় কোয়েল পালনঃ

এই পদ্ধতিতে লোহা,জি আই তার দিয়ে কোয়েলের জন্য বিশেষভাবে খাঁচা তৈরি করা হয়ে থাকে।তবে কেউ চাইলে বাঁশ-কাঠ দিয়েও খাঁচা বানাতে পারে।তবে লোহার খাঁচা টেকসই ও ভাল হবে।

খাঁচায় মেঝে সামনের দিকে হাল্কা ঢালু করে তৈরি করা হয় যাতে পাখি খাঁচায় ডিম পাড়লে ডিম গড়িয়ে যেন সামনে চলে আসে।

খাঁচার একপাশে লম্বা ভাবে তৈরি খাবার পাত্র ও পানির পাত্র লাগানো থাকে।

আমাদের দেশে কোয়েলের যে বানিজ্যিক খাঁচা পাওয়া যায় সে সম্পর্কে কিছু তথ্যঃ

খাঁচার দৈর্ঘ্যঃ ৬ ফুট

খাঁচার প্রস্থঃ ২.৫ ফুট (ভিতরের জায়গা ২ ফুট আর বাইরের সামনের দিকের ডিমের ট্রে ০.৫ ফুট।

খাঁচায় তাকের সংখ্যাঃ ৫ টি।

প্রতিটি তাকের উচ্চতাঃ ১০-১২ ইঞ্চি

প্রতিটি তাকে পাখির রাখা যায়ঃ ১০০ টি।

একটা খাঁচায় মোট পাখি রাখা যায়ঃ ৫০০ টি।

৫০০ পাখির খাঁচা তৈরির আনুমানিক খরচঃ ১৫-১৮ হাজার টাকা।



কোয়েল পাখির আদর্শ খাঁচা


## খাঁচায় কোয়েল পালনের সুবিধাঃ

খাঁচায় কোয়েল পালন সবচেয়ে যুক্তিযুক্ত আরসহজ।

কারন–

ডিম গড়িয়ে এসে ট্রে তে জড়ো হয়।ফলে ডিমসংগ্রহ করা সহজ।

ডিম ভেঙ্গে যাওয়ার সম্ভাবনা কম।

সহজেই খাবার ও পানি দেয়া যায়।

পায়খানা বা মল খাঁচার প্রতি তলার নিচে রাখাট্রে তে পড়ে।ফলে মল বা পায়খানা পরিষ্কারকরা অতি সহজ।

অল্প জায়গায় একটা খাঁচায় পাঁচ তাক করেফ্লোরের চেয়ে পাঁচ গুন বেশি পাখি পালা যায়।

রোগ বালাই কম হয়।কারন পায়খানা নিয়মিতট্রে থেকে সরিয়ে নেয়া হয়।

খাঁচার নেটের ফাঁকা ছোট হওয়ায় ইঁদুর ঢুকতেপারে না।

ঘন ঘন লিটার পরিস্কার করার ঝামেলা থাকেনা।

খাঁচায় পালন করলে এমোনিয়া গ্যাস হওয়ারসম্ভাবনা নাই।

পাখির দৈহিক চাকচিক্য বজায় থাকে।

পাখির পালক সহজে পড়ে যায় না 


## খাঁচায় কোয়েল পালনের অসুবিধাঃ

খাঁচায় কোয়েল পালনের অসুবিধা নেই বললেইচলে।তবে খাঁচায় পালন করতে হলে কিছু বিষয়আগেই জেনে রাখা উচিত।

যেমন–

লোহার খাঁচা তৈরি করতে বেশি মূলধন লাগে।

আবার বাঁশের খাঁচা তৈরি করলে বেশিদিনটেকসই হয় না।

খাঁচা তৈরির খরচ বাদে ও আবার সেই খাঁচারাখার জন্য লিটার পদ্ধতির মত একটা সেডতৈরি করা লাগে।ফলে খরচ লাগে বেশি।

নিয়মিত খাঁচার মলের বা পায়খানার ট্রেপরিষ্কার না করলে প্রচুর দূর্গন্ধ হয়।


## কোন পদ্ধতিতে কোয়েল পালন লাভজনক???

লিটার পদ্ধতিতে কোয়েল পালনের সুবিধা ও অসুবিধা এবং খাঁচায় কোয়েল পালনের সুবিধা ও অসুবিধা জানার পরে এখন সিদ্ধান্ত আপনার।উপরোক্ত সুবিধা অসুবিধা বিবেচনা করেই আপনার সামর্থ্য অনুযায়ী খামার করতে পারেন।

তবে লেখক হিসেবে নয়;একজন খামারী হিসেবে আমি ব্যক্তিগতভাবে আপনাকে পরামর্শ দিব –খাঁচায় কোয়েল পালন করতে।

যদিও মূলধন একটু বেশি লাগবে,তবুও সুবিধা অনেক বেশি পাবেন।


## একটি আদর্শ কোয়েল খামারের বৈশিষ্ট্যঃ

কোয়েল খামার করার জন্য কিছু বিষয় অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে-

খামার টি অবশ্যই পূর্ব-পশ্চিম বরাবর লম্বা হতে হবে।

খামারটি প্রস্থে ১৫ ফুটের বেশি হওয়া উচিত নয়।তবে লম্বায় পূর্ব-পশ্চিম বরাবর যত খুশি বড় করা যেতে পারে।কিন্তু খেয়াল রাখতে হবে যে,সর্বোচ্চ ২০ ফুট পরে পরে বেড়া দিয়ে খোপ খোপ করে দুই বা ততোধিক রুমে ভাগ করে নিতে হবে।

অবশ্যই খামারের চারিদিকে খোলামেলা রাখতে হবে যেন আলো ও বাতাস চলাচল করতে পারে।

খামার টি এমন জায়গায় করতে হবে যেন সূর্যের আলো খামারে প্রবেশ করতে পারে।

খামারে যেন ইঁদুর বিড়াল ঢুকতে না পারে সেই ব্যবস্থা করতে হবে।

খামারের চারিদিকে পর্দা লাগানোর সিস্টেম থাকতে হবে।তবে পর্দার সিস্টেম এমন হতে হবে যেন-পর্দা দেয়ালের নিচ থেকে খামারের ভেতর থেকে রশি দিয়ে টেনে টেনে উপরের দিকে তোলা যায়। অর্থাৎ পর্দা উপর থেকে নয়; নিচ থেকে লাগাতে হবে।কারন খামারের সৃষ্ট গ্যাস হালকা বলে তা উপর দিয়ে বের হবে কিন্তু উপরে যদি পর্দা দিয়ে আটকানো থাকে তবে গ্যাস বের হতে পারে না।

অতিরিক্ত গরমে ফ্যান ও শীতে তাপ দেয়ার ব্যবস্থা থাকতে হবে।

পর্যাপ্ত খাবার ও পানির পাত্র থাকতে হবে।

খামারে ব্যবহৃত নেট লোহার বা জি আই তারের না হয়ে বর্তমানে প্লাস্টিকের নেট পাওয়া যায়-এগুলা চারিদিকের নেট হিসেবে ব্যবহার করলে ভাল হবে।কারন প্লাস্টিক রোদ-বৃষ্টিতে নষ্ট হয় না।


## কোন পদ্ধতিতে কতটুকু জায়গা লাগবেঃ

লিটার পদ্ধতিতে সাধারনত জায়গা বেশি লাগে কিন্তু খাঁচায় পালন করলে জায়গা কম লাগবে।

লিটারে জায়গা বরাদ্দঃ

লিটার পদ্ধতিতে প্রতি বর্গ ফুট জায়গায় ৫-৬ টি পূর্ণ বয়স্ক পাখি পালন করা যাবে।

খাঁচায় জায়গা বরাদ্দঃ

খাঁচা পদ্ধতিতে প্রতি বর্গি ফুট জায়গায় ৭-৮ টি পূর্ণ বয়স্ক পাখি পালন করা যায়।

বর্গ ফুটের হিসাব হচ্ছে আপনার খামার বা খাঁচার দৈর্ঘ্য(ফুট) আর প্রস্থ(ফুট) গুন করলে যেটা বের হবে সেটাই বর্গ ফুট।

উদাহরনঃ

আপনার খামারের দৈর্ঘ্য ১৫ ফুট আর প্রস্থ ১০ ফুট।

তাহলে টোটাল জাগয়ার পরিমাণ হবে= ১৫ X ১০ = ১৫০ বর্গ ফুট।

আর এই ১৫০ বর্গ ফুটে আপনি পূর্ণ বয়স্ক পাখি রাখতে পারবেন প্রায়=১৫০ X ৬=৯০০ টি

আবার খাঁচা পদ্ধতি হলে, আপনার খাঁচার দৈর্ঘ্য ৬ ফুট আর প্রস্থ ৩ ফুট হলে প্রতি তলার জায়গা হবে=৬ X ৩=১৮ বর্গ ফুট।

এই ১৮ বর্গ ফুটে পাখি রাখা যাবে=১৮ X ৮=১৪৪ টি।

এখন খাঁচাটি ৫ তাক বিশিষ্ট হলে মোট পাখি ধরবে= ৫ X ১৪৪=৭২০ টি।


##কোয়েল পালনের উদ্দেশ্যঃ

সাধারনত দুইটি উদ্দেশ্যে কোয়েল পালন করা হয়ে থাকে।

ডিম উৎপাদনের জন্য

মাংস উৎপাদনের জন্য

ডিম উৎপাদনে কোয়েলঃ

আমাদের দেশে প্রধানত ডিম উৎপাদনের জন্যই কোয়েল চাষ করা হয়ে থাকে।তবে পুরুষ পাখি গুলা যেহেতু ডিম দেয় না তাই পুরুষ পাখি মাংস হিসেবে বিক্রি করা হয়ে থাকে।

মাংস উৎপাদনে কোয়েলঃ

কোয়েলের মাংস এখনো আমাদের দেশে অতটা পরিচিত হতে পারে নি।তবে দেশের চট্টগ্রাম,সিলেট,মৌলভীবাজার এলাকায় কোয়েলের মাংস বেশ জনপ্রিয়।তারা বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠানে কোয়েলের রোস্ট পরিবেশন করে।তাই এইসমস্ত এলাকায় যারা আছেন তারা মাংসের জন্য কোয়েল উৎপাদন করতে পারেন।


## পুরুষ ও মহিলা কোয়েল চেনার উপায়ঃ

পুরুষ ও মহিলা কোয়েল চেনার বেশ কিছু পদ্ধতি রয়েছে-

বুকের পালক দেখে

ডাক শুনে

পায়ুপথ দেখে

এছাড়া বাচ্চা কোয়েলের ভেণ্ট পরীক্ষা করেও লিঙ্গ বাছাই করা যায় তবে সেক্ষেত্রে অভিজ্ঞ হতে হয়।

১)বুকের পালক দেখেঃ

পুরুষ কোয়েলঃ সাধারনত পুরুষ কোয়েলের বুকের দিকের পালক গুলা গাঢ় বাদামি কালারের হয়ে থাকে।

পুরুষ পাখি

মহিলা কোয়েলঃ মহিলা কোয়েলের বুকের দিকের পালক বাদামি কালারের মাঝে মাঝে কালো রঙ্গের ফোটা ফোটা থাকে।দেখতে ফুলের মত মনে হয়।

মহিলা পাখি

কোয়েলের বয়স ২৫ দিন না হলে এই পালক দেখে পুরুষ-মহলা শনাক্ত করা যায় না।কারন ২০ দিনের কম বয়সী বাচ্চাদের বুকের কালার দেখতে প্রায় একইরকম হয়ে থাকে।

পুরুষ ও মহিলা পাখি একসাথে

২) ডাক শুনেঃ

পুরুষ কোয়েলঃ সাধারনত পুরুষ কোয়েল গলা টানা দিয়ে উচু হয়ে প্রচুর ডাকাডাকি করে।

তবে কোয়েলের বয়স যখন ৩৫ দিনের বেশি হয় তখনই কেবল এরা ডাকাডাকি করে থাকে।তাই ৩৫ দিনের কম বয়সয় পাখি এই পদ্ধতিতে সনাক্ত করা যায় না।

মহিলা কোয়েলঃ মহিলা কোয়েল সাধারনত ডাকাডাকি করে না।

৩) পায়ুপথ দেখেঃ

পুরুষঃ প্রাপ্ত বয়স্ক কোয়েল (৪০-৪৫ দিন বয়সী) এর পায়ুপথের দিকে টিউমারের মত ফোলা অংশ দেখা যায়।এখানে হাল্কা চাপ দিলে সাদা ফেনার মত বের হবে।

মহিলাঃ মহিলা কোয়েলের পায়ুপথে এরকম কোনো ফোলা অংশ থাকে না।স্বাভাবিক ও প্লেইন থাকে।

বিঃদ্রঃ এক্ষেত্রে কোয়েলের বয়স ৪০-৪৫ দিন হতে হবে।

সাদা রঙয়ের কোয়েল পাখি বুকের পালক দেখে চেনা যায় না।তাই সাদা পাখির লিঙ্গ নির্ণয়ের জন্য পায়ুপথ ও ডাক শুনে শনাক্ত করতে হবে।


## বিভিন্ন বয়সী কোয়েলের দামঃ

প্রথমেই বলে নিতে চাই-কোয়েলের বাচ্চার দাম স্থান,বয়স,সময়,কোয়ালিটি,চাহিদা ও খামারের মালিকের ব্যক্তিগত ইচ্ছার উপরে নির্ভর করে।

যেমন খুলনায় বা বগুড়ায় বাচ্চার দাম আর চট্টগ্রামে বাচ্চার দাম একই না ও হতে পারে।আবার বিভিন্ন বয়সী ও ভাল-মন্দ কোয়ালিটির উপরের বাচ্চার দাম কম বেশি হতে পারে।

এছাড়া আমাদের দেশে যে রকম ব্রয়লার বা লেয়ারের বাচ্চার দাম একটা মহল ঠিক করে দেয়,কোয়েলের ক্ষেত্রে কিন্তু এমনটা নেই।খামারি পর্যায়ে বাচ্চার মালিক তার ইচ্ছামত বাচ্চার দাম কমিয়ে বা বাড়িয়ে নিতে পারেন।আবার দেখা যায় যে ডিমের চাহিদা শীতকালে বেশি থাকে তাই শীতের আগে বাচ্চার দাম বেড়ে যায় কারন সবাই তখন বাচ্চা তোলে। যার জন্য চাহিদা বেড়ে যায় ফলে বাচ্চার দাম ও বেডে যায়।কিন্তু গরমে ডিমের চাহিদা কমে যায় ফলে বাচ্চার দাম ও কমে যায়।

আবার এখন ২০১৯ সালে বাচ্চার দাম যা আছে ,তা হয়ত সময়ের সাথে সাথে বৃদ্ধি পাবে।

তবুও আপনাদের কে একটা আইডিয়া দেয়ার জন্য আমি বর্তমান বাজার অনুযায়ী একটা লিস্ট দিয়ে দিলাম-

বয়স (দিন)আনুমানিক দাম (টাকা)১ দিন৭-৮ টাকা১৫ দিন১৭ টাকা২৫ দিন২৫-২৬ টাকা৩০ দিনপুরুষঃ২৬-২৭ টাকা মহিলাঃ৩২-৩৫ টাকা৪০ দিনপুরুষঃ৩০-৩২ টাকা মহিলাঃ৪০-৪৫ টাকা


## কোথা থেকে বাচ্চা সংগ্রহ করবেনঃ

কোয়েলের বাচ্চা অবশ্যই যে কোনো খামার থেকে সংগ্রহ করবেন।কোনো হকার বা দোকান থেকে না কেনাই উত্তম।কারন,দোকানদার অনেক দূর থেকে বাচ্চা এনে দোকানে রাখে এতে বাচ্চা একটা ধকল খায়।আবার আপনি বহন করে আপনার খামারে নিবেন এতে করে বাচ্চা গুলা আবার ও ধকল খাবে।এতে বাচ্চার উৎপাদন ক্ষমতা কমে যায়।

তাছাড়া দোকানী যেহেতু লাভ করবে তাই সে কিন্তু বাচ্চাকে বেশি বেশি খাবার দিবে না ফলে বাচ্চা দূর্বল হয়ে পড়ে এবং বাচ্চার মান ভাল হয়না।

তাই আপনি অবশ্যই যেকোনো খামার বা হ্যাচারি থেকে বাচ্চা সংগ্রহ করবেন।


## খামারে বাচ্চা আনার আগে যা যা করতে হবেঃ

খামারে বাচ্চা আনার আগে আপনাকে কিছু পূর্ব প্রস্তুতি নিতে হবে-

খামারে বাচ্চা আসার আগে থেকেই আপনাকে ব্রুডিং ঘরে ব্রুডার চালু করে প্রয়োজনীয় তাপমাত্রা বজায় রাখতে হবে।(২৬ নিং পেজে দেয়া আছে)।

ব্রুডার ঘর ভাল ভাবে জীবানুমুক্ত করে নিতে হবে।

পর্যাপ্ত পরিস্কার ও জীবানুমুক্ত পাত্রে খাবার ও পানি রেডি করে রাখতে হবে।

প্রথম দিনের পানিতে লাইসোভিট বা গ্লুকোজ ও ভিটামিন-সি মিশিয়ে দিতে হবে।


## বাচ্চা পরিবহন পদ্ধতিঃ

বর্তমানে কোয়েল পাখি পরিবহণ করার জন্য প্লাষ্টিকের ছিদ্রযুক্ত গোল ঝুড়ি বাজারে পাও্যা যায়।

কোয়েলের বাচ্চা পরিবহনের জন্য আপনি ফলের দোকানে যে চায়না কমলালেবুর সাদা প্লাস্টিকের কেজ পাওয়া যায় তা ব্যবহার করতে পারেন।

এছাড়া বাঁশের চাটাই দিয়ে তৈরি সাপের ঝুড়ির মত যে গোল খাঁচা পাওয়া যায় সেটাও ব্যবহার করতে পারেন।

এছাড়া মুরগির বাচ্চার পরিবহনের জন্য যে কাগজের কেজ পাওয়া যায় সেটা ব্যবহার করা যায়।

তবে বেশি ভাল হবে যদি ফলের দোকান থেকে চায়না লেবুর সাদা প্লাস্টিকের ঝুড়িতে পরিবহন করা যায়।

বাচ্চা পরিবহনের জন্য বাঁশের ঝুড়ি

বাচ্চা পরিবহনের জন্য প্লাস্টিকের ফলের ঝুড়ি


## কোয়েলের খাদ্যঃ

কোয়েল পাখির জন্য বাজারে স্পেশাল্ভাবে কোনো ফিড কোম্পানি খাদ্য তৈরি করে না।তবে বাজারে যে মুরগির খাদ্য পাওয়া যায় সেই খাবারই কোয়েলের খাদ্য হিসেবে ব্যবহার করা যায়।

কোয়েল পাখির খাদ্য গ্রহণের পরিমাণ এদের বয়স,শীত মৌসুম, গ্রীষ্ম বা বর্ষাকাল এবং খাদ্যে বিভিন্ন পুষ্টির ঘনত্ব (প্রধান শক্তি ও আমিষ) ইত্যাদি উপাদানের উপর নির্ভর করে। জন্মের দিন থেকে ৫ সপ্তাহ পর্যন্ত বাচ্চাপ্রতি মাত্র ৪০০-৫০০ গ্রাম খাদ্যের প্রয়োজন হয়৷ ছয় সপ্তাহ বয়স থেকে প্রতিটি পাখির দৈনিক ২০-২৫ গ্রাম খাদের প্রয়োজন হয়।

কোয়েলের খাদ্যকে তাদের বয়স অনুযায়ী তিন ভাগে ভাগ করা যায়-

বাচ্চাদের স্টার্টার খাদ্য

বাড়ন্তদের গ্রোয়ার খাদ্য

ডিম পাড়া পাখির লেয়ার খাদ্য

স্টার্টার খাদ্যঃ বাজারে প্রাপ্ত ব্রয়লার মুরগির বাচ্চার জন্য যে স্টার্টার ফিড বা খাদ্য পাওয়া যায় সেটাই কোয়েলের বাচ্চাকে খাওয়ানো যায়।

স্টার্টার খাদ্য সাধারনত ক্রাম্বল টাইপের ছোট ছোট গোলাকার গুড়া খাদ্য।

১ দিন বয়স থেকে ২৫ দিন বয়সী কোয়েলের বাচ্চাদেরকে স্টার্টার খাদ্য দিতে হবে।

পিলেট ও ম্যাশ জাতীয় খাদ্য

গ্রোয়ার খাদ্যঃ বাজারে ব্রয়লার মুরগির জন্য যে গ্রোয়ার ফিড বা খাদ্য পাওয়া যায় সেটাই কোয়েলের জন্য ব্যবহার করা হয়।

গ্রোয়ার খাদ্য সাধারনত পিলেট বা দানাদার টাইপের হয়।

২৬ দিন বয়স থেকে ডিম পাড়া শুরু করার পরবর্তী ৭ দিন পর্যন্ত কোয়েলকে এই ব্রয়লার গ্রোয়ার খাদ্য খাওয়াতে হয়।

লেয়ার খাদ্যঃ বাজারে প্রাপ্ত লেয়ার বা ডিম পাড়া মুরগির জন্য যে “লেয়ার লেয়ার-১” ফিড বা খাদ্য পাওয়া যায় সেটাই ডিম পাড়া কোয়েলেকে খাওয়ানো যায়।

লেয়ার খাদ্য সাধারনত ম্যাশ বা গুড়া টাইপের হয়।

এই “লেয়ার লেয়ার-১”খাদ্য কোয়েলকে ডিম পাড়া শুরুর ১ সপ্তাহ পর থেকে রিজেক্ট হওয়ার আগ পর্যন্ত খাওয়ানো হয়।

ডিম পাড়া কালীন অবস্থায় ভাল প্রোডাকশন পেতে শুধু লেয়ার লেয়ার-১ ফিড না খাইয়ে লেয়ার ফিডের সাথে তিন ভাগের এক ভাগ ব্রয়লার গ্রোয়ার ফিড মিশিয়ে খাওয়ালে ভাল দল পাও্যা যায়।অর্থ্যাত ২ বস্তা “লেয়ার লেয়ার-১” ফিডের সাথে ১ বস্তা ব্রয়লার স্টার্টার ফিড মিক্স করে খাওয়াতে হবে।

বয়স অনুযায়ী পানি ও খাবার পাত্র বরাদ্দ

খাবার ও পানির পাত্রের ধরন ও পরিমাণ কোয়েলের বয়স ও আবহাওয়ার উপর নির্ভর করে।

বিভিন্ন ধরনের খাবার ও পানির পাত্র


খাবার পাত্রঃ বয়স অনুযায়ী খাবার পাত্র বরাদ্দ দিতে হবেঃ

বয়সপাখির সংখ্যাপাত্রের সংখ্যা১ম সপ্তাহ–পেপারে ছিটিয়ে দিতে হবে২য় সপ্তাহ১৫০১ টি৩য় সপ্তাহ১২০১ টি৪র্থ সপ্তাহ১১০১ টি৫ম সপ্তাহের অধিক১০০১ টি

পানির পাত্রঃ বয়স অনুযায়ী পানির পাত্র বরাদ্দ দিতে হবে।

বয়সপাখির সংখ্যাপাত্রের সংখ্যা১ম সপ্তাহ১৫০বোতলযুক্ত ছোট-১ টি২য় সপ্তাহ১৩০মাঝারি পানির পাত্র-১ টি৩য় সপ্তাহ১২০মাঝারি পানির পাত্র-১ টি৪র্থ সপ্তাহ১১০বড় পানির পাত্র-১ টি৫ম সপ্তাহের অধিক১০০বড় পানির পাত্র-১ টি


কোয়েলের জন্য প্রয়োজনীয় পানির ব্যবস্থাপনাঃ

সাধারণভাবে যেকোন বয়সের কোয়েল তার প্রয়োজনীয় খাবারের দ্বিগুণ পানি গ্রহণ করে থাকে৷তবে সব সময় পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি দিয়ে রাখাই উত্তম।

পানি প্রদানের ক্ষেত্রে নিম্নলিখিত বিষয়গুলোর প্রতি সবসময় দৃষ্টি রাখতে হবে৷

সবসময় ডীপ টিউবলের পানি ব্যবহার করতে হবে।সরাসরি পুকুরের পানি ব্যবহার করা উচিত নয়।যদি বিশেষ ক্ষেত্রে করতে হয় তবে অবশ্যই ফিটকিরি দিয়ে পানি পরিষ্কার করে নিতে হবে।

পাখিকে সব সময় পরিস্কার ও বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ করতে হবে৷

প্রতিটি পাখির জন্য পর্যাপ্ত বিশুদ্ধ পানি ও পাখির পাত্র সরবরাহ করতে হবে৷

দুইবেলা খাবার সরবরাহ করার সময় বিশুদ্ধ পানিও সরবরাহ করতে হবে৷

লিটার সামগ্রী পড়ে কোনভাবে পানির পাত্র যেন নোংরা না হয় সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে৷

পানির পাত্রগুলো দৈনিক কমপক্ষে দু’বার ( সকাল-বিকাল) পরিষ্কার করতে হবে৷

পানির পাত্র পুরোপুরিভাবে পূর্ণ করা উচিত নয়৷ এতে পানি পড়ে লিটার ভিজে স্যাঁতসেঁতে হয়ে যায়৷


কোয়েল খামারের আলোক ব্যবস্থাপনাঃ

কোয়েলীর ডিম উৎপাদন আলোর উপর যথেষ্ট নির্ভরশীল৷ ৬ষ্ঠ সপ্তাহে ১৩ ঘন্টা আলোর ব্যবস্থা করতে হবে (দিনের আলোসহ) ৷ ৭ম,৮ম ও ৯ম সপ্তাহে প্রতি সপ্তাহে একঘন্টা হিসেবে বাড়িয়ে তা যথাক্রমে ১৪, ১৫ ও ১৬ ঘন্টায় বৃদ্ধি করতে হবে৷পর্যাপ্ত সংখ্যায় ডিম পেতে হলে কোয়েলীর ঘরে ৯ম সপ্তাহ থেকে দৈনিক ১৬ ঘন্টা আলোর ব্যবস্থা (দিনের আলোসহ) থাকতে হবে৷ উল্লেখ্য,একটি ৪০ ওয়াটের বাল্ব দিয়ে ১০.০ বর্গমিটার জায়গা আলোকিত করা যায়৷ সাদা বর্ণের আলোর তুলনায় লাল বর্ণের আলোয় কোয়েলের ডিম উৎপাদন বেশী বৃদ্ধি পায়৷তাই এনার্জি বাল্ব ব্যবহার না করে লাল আলোর বাল্ব ব্যবহার করা উচিত।


বয়স অনুযায়ী আলো দেয়ার পরিমানঃ

বয়স ( সপ্তাহ)আলো (দিনের আলো সহ)১ম সপ্তাহ২৪ ঘণ্টা২য় সপ্তাহ২৪ ঘণ্টা৩য় সপ্তাহ১৬ ঘণ্টা৪র্থ সপ্তাহ১৫ ঘণ্টা৫ম সপ্তাহ১৪ ঘণ্টা৬ষ্ঠ সপ্তাহ১৩ ঘণ্টা৭ম সপ্তাহ১৪ ঘণ্টা৮ম সপ্তাহ১৫ ঘণ্টা৯ম সপ্তাহ১৬ ঘণ্টাবাকি সময়১৬ ঘণ্টা


নিজেই কোয়েলের খাদ্য তৈরি করার উপায়ঃ

আমাদের হাতের নাগালে প্রাপ্ত বিভিন্ন খাদ্য উপাদান দিয়ে নিজেই কোয়েলের জন্য সুষম খাদ্য তৈরি করতে পারেন।

তবে পরামর্শ হল-যদি আপনি বড় পরিসরে খামার করেন তবেই কেবল আপনি নিজে খাদ্য তৈরিকরার চিন্তা করবেন।

নিচে কোয়েলের স্টার্টার,গ্রোয়ার এবং লেয়ার খাদ্য তৈরির জন্য প্রয়োজনীয় উপাদান ও পরিমান দেয়া হল-

কোয়েলের স্টার্টার খাদ্য (১০০ কেজি)ঃ

১) গম ভাঙ্গা ৫০ কেজি২) চাউলের মিহি গুড়া ০৬ কেজি৩) তিলের খৈল ২৩ কেজি৪) শুটকি মাছের গুড়া ১৮ কেজি৫) ঝিনুকের গুড়া / ডিসিপি ২.৪ কেজি৭) লবন ৩০০ গ্রাম৮) ভিটামিন ও মিনারেল প্রিমিক্স৩০০ গ্রাম

কোয়েলের গ্রোয়ার খাদ্য (১০০ কেজি)ঃ

১) গম ভাঙ্গা/ভুট্টা ভাঙ্গা ৫০ কেজি২) চাউলের মিহি গুড়া ০৮ কেজি৩) তিলের খৈল ২৩ কেজি৪) শুটকি মাছের গুড়া ১৫ কেজি৫) ঝিনুকের গুড়া / ডিসিপি ৩.৪ কেজি৭) লবন ৩০০ গ্রাম৮) ভিটামিন ও মিনারেল প্রিমিক্স৩০০ গ্রাম

কোয়েলের লেয়ার খাদ্য (১০০ কেজি)ঃ

১) গম ভাঙ্গা /ভুট্টা ভাঙ্গা ৫০ কেজি২) চাউলের মিহি গুড়া ০৯ কেজি৩) তিলের খৈল ২৩ কেজি৪) শুটকি মাছের গুড়া ১২ কেজি৫) ঝিনুকের গুড়া / ডিসিপি ৫.৩ কেজি৭) লবন ৪০০ গ্রাম৮) ভিটামিন ও মিনারেল প্রিমিক্স৩০০ গ্রাম

কোয়েলের ডিম ও মাংসের উপকারিতাঃ

পৃথিবীতে যত প্রকার খাবার উপযোগী ডিম ও মাংস আছে তার মধ্যে কোয়েল পাখির ডিম ও মাংস গুনে মানে, পুষ্টিতে এবং স্বাদে সর্বশ্রেষ্ঠ। একটি নির্দিষ্ট বয়সের পর নিয়মিত মুরগীর ডিম এবং বিভিন্ন মাংস খেলে কোলেস্টেরল বেড়ে হৃদ রোগের ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়।

কোয়েলের মাংস

অথচ কোয়েলের ডিম এবং মাংস নিসংকোচে যে কোনো বয়সের মানুষ বাচ্চা থেকে বৃদ্ধরা খেতে পারে। এতে ক্ষতির কোনো কারণ নেই বরং নিয়মিত কোয়েলের ডিম ও মাংস গ্রহণ করলে অনেক কঠিন রোগ থেকে আরোগ্য লাভ হতে পারে। বিভিন্ন দেশে কোয়েল পাখি নিয়ে অনেক গবেষণা হয়েছে এবং সব জায়গা থেকে গবেষকরা কোয়েলের ডিম ও মাংস নিশ্চিন্তে খাওয়ার পক্ষে মত দিয়েছেন।

কোয়েলের ডিম

কি আছে কোয়েলের ডিম ও মাংসে?

কোয়েল ডিম এর মধ্যে প্রোটিন, ভিটামিন, মিনারেল, এনজাইম এবং এমাইনো এসিড এমনভাবে বিন্যাসিত যে, এই ডিম খেলে শরীরে সব ধরণের পুষ্টির অভাব পুরণ করে শরীরের কার্যক্ষমতা বাড়িয়ে দেয়।

মুরগীর ডিমের সঙ্গে তুলনা করে দেখা গেছে কোয়েল ডিমে কোলেস্টেরেল যেখানে ১.৪% সেখানে মুরগীর ডিমে ৪% এছাড়া কুসুমে প্রোটিনের পরিমান মুরগীর থেকে প্রায় শতকরা ৭ ভাগ বেশী।

কোয়েল ডিমে ভিটামিন বি-১ এর পরিমান মুরগীর ডিম থেকে ছয়গুণ বেশী। ফসফরাস পাঁচ গুণ বেশী। আয়রন পাঁচ গুণ বেশী। ভিটামিন বি-২ পনেরো গুণ বেশী।

স্বাদের বিচারে ব্রয়লার মুরগীর মাংসের তুলনায় কোয়েলের মাংস বেশ মুখরোচক এবং দামের বিচারেও ১টি মুরগীর ডিমের দামে প্রায় ৪টি কোয়েলের ডিম পাওয়া যায়।

নিয়মিত সকালের খাদ্য তালিকায় ৪/৫টা কোয়েল ডিম এবং সপ্তাহে অন্তত একবার কোয়েলের মাংস খেলে যে উপকার হয়-

কিডনী, লিভার এবং হ্রদপিন্ডের কার্যক্ষমতা উন্নত করে।

হজম শক্তি বাড়াতে এবং এসিডিটি কমাতে সাহায্য করে।

বাচ্চাদের মানসিক, শারীরিক এবং বুদ্ধিমর্ত্তার বিকাশে সহায়ক।

সব বয়সের লোকদের পূর্ণজ্জীবিত এবং কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি করে।

যৌন ক্ষমতা তথা শারিরিক সক্ষমতা বৃদ্ধি করে।

কোয়েলের ডিম ও মাংস ডায়বেটিক রোগীরা নিশ্চিন্তে খেতে পারেন।

কোয়েলের ডিম ও মাংস বেশ সস্তা।

(তথ্যসূত্রঃ এই অংশটুকু ইন্টারনেট থেকে সংগৃহীত।)


কোয়েলের মাংস বাজারজাতকরণ পদ্ধতিঃ

আমাদের দেশে কোয়েলের মাংস এখনও এতটা জনপ্রিয়তা পায়নি।কারন কোয়েল পাখি সম্বন্ধে মানুষ এখনো বিস্তারিত ভাল্ভাবে জানে না।তবে খুব শীঘ্রই কোয়েল পাখির মাংস মানুষের মাঝে জনপ্রিয়তা পাবে।এর জন্য কোয়েলের মাংসের গুনাগুন সম্পর্কে মানুষের প্রচারণা চালাতে হবে।এক্ষেত্রে খামারীদের অগ্রণী ভূমিকা রাখতে হবে।

খামার করলে খামারে উৎপাদিত পুরুষ পাখি মাংস হিসেবে বিক্রি করতে হবে।তাই মানুষ যাতে কোয়েলের মাংস খেতে আগ্রহী হয় এবং মাংস খাওয়া শিখে সে জন্য খামারিরা অভিনব কিছু টেকনিক অবলম্বন করলে ভাল ফল পেতে পারেন।

আপনার এলাকার হোটেল গুলোতে যোগাযোগ করুন।তাদের কাছে কোয়েলের মাংসের গুনাগুনের কথা বলুন।এবং তাদের বলুন যে-তাদের হোটেলে কোয়েলের রোষ্ট বা মাংসের একটা আইটেম থাকলে তাদের খাবারের মেনু তে ভিন্নতা আসবে।যা তাদের হোটেলের সুনাম বাড়াবে।

বিভিন্ন অনুষ্ঠান উপলক্ষ্যে আপনার আত্মীয়স্বজনদের দাওয়াত দিয়ে কোয়েলের মাংসের আইটেম পরিবেশন করুন।এতে করে প্রচারণা বাড়বে।

এলাকার লোকাল হাঁস-মুরগির হাটে হকারদের মাধ্যমে মাংসের জন্য পুরুষ পাখি বিক্রি করতে দিন।

এছাড়া স্থানীয় মুরগির দোকানে কথা বলে অল্প করে কোয়েল পাখি রাখতে পারেন।এতে মানুষ দেখবে,জানবে,শুনবে এবং প্রচারণা বাড়বে।

তবে আপনি চাইলে দেশের অন্যতম বড় কোয়েলের পাইকারি বাজার ঢাকার নিমতলির পোল্ট্রি মার্কেটে ও যেকোনো পরিমাণ পুরুষ ও রিজেক্ট বা বাচ্চা পাখি বিক্রয় করতে পারবেন।

এই বইয়ের শেষের দিকে ঢাকার নিমতলির পাইকারী দোকানের নাম,ঠিকানা ও ফোন নাম্বার দেয়া আছে।সেখানে যোগাযোগ করে যেকোনো পরিমান পুরুষ বা মাংসের পাখি বিক্রয় করতে পারবেন।


কোয়েলের ডিম বাজারজাতকরণ পদ্ধতিঃ

কিভাবে আপনি ডিম বাজারজাত করবেন সেটার উপরেও আপনার লাভের পরিমান নির্ভর করবে।

যেমন আপনি যদি আপনার খামারের পাশের বাজারেই ডিম বিক্রি করতে পারেন তবে আপনার লাভ বেশি হবে।কারন আপনার ট্রান্সপোর্ট খরচ হবে না।এছাড়া স্থানীয় বাজারে ডিমের দাম ভাল পাওয়া যায়।

কিন্তু আপনি যদি আপনার এলাকা থেকে অন্য জেলায় বা ঢাকায় ডিম বিক্রি করতে চান তবে আপনার খরচ বেশি হবে ফলে লাভ কমে আসবে।

এছাড়া সবচেয়ে বড় সত্য হচ্ছে এই যে, ঢাকার নিমতলিতে যে কোয়েলের পাইকারি বাজার রয়েছে সেখানে ডিমের দাম গরমের সময় অনেক কম দেয়।এছাড়া তারা আপনাকে যে দাম বলবে আপনাকে সেই দামেই বিক্রি করতে হবে।

তাই আপনাকে খামার করার আগে চিন্তা করতে হবে যে আপনি নিজের এলাকায় ডিম বিক্রি করতে পারবেন কিনা?

কারন আপনার এলাকায় ডিমের দাম কত হবে সেটা শুধু আপনিই নির্ধারন করবেন।

যেমন আমি আমার এলাকায় শীত বা গরম যে কোনো সময় সারা বছর জুড়েই পাইকারি ২ টাকা প্রতি পিস দরে সেল করি (২০১৭ সালের হিসেবে)।

এখন কথা হচ্ছে এলাকায় এত ডিম বিক্রি করব কিভাবে?? বা আমার এলাকার মানুষ তো কোয়েলের ডিম চেনে না,তো কিভাবে বিক্রি করব???

সমাধান হচ্ছে মার্কেট ঘুরে আপনাকে অনুমান করতে হবে যে কি পরিমান ডিম বিক্রি হতে পারে।আপনাকে সে হিসেব করে খামারের পরি্ধি বৃদ্ধি করতে হবে।এজন্য অল্প করে পাখি দিয়ে খামার শুরু করুন এবং দেখুন চাহিদা কেমন? সেই অনুসারেই খামারের পাখির সংখ্যা বাড়াবেন।

আর দ্বিতীয় সমস্যা হচ্ছে যে –মানুষ কোয়েলের ডিম চেনে না।

মানুষ একটা পণ্য যদি কোনো দিন বাজারে না দেখে তাহলে সে কিভাবে চিনবে বা কিনবে? তাই পন্য টা প্রথমে বাজারে তুলতে হবে,মানুষ দেখবে,জানবে,শুনবে এবং ক্রয় করবে।দিনে দিনে চাহিদা বাড়বে।

তাই স্বল্প পরিসরে শুরু করে দিন,আস্তে আস্তে মানুষের কাছে কোয়েলের ডিম ও মাংসের চাহিদা তৈরি করুন।

কোয়েলের ডিম বিক্রির কিছু অভিনব কৌশলঃ

আপনার এলাকার কিছু হকার খুঁজে বের করুন।তাদের সাথে কথা বলুন।আশে পাশের বাজারে তাদের ২-১ দিন ডিম বিক্রি করে দেখার কথা বলুন।

এছাড়া এলাকার স্কুল কলেজে কিছু হকার বা ছোট দোকানি রয়েছে যারা ঝালমুড়ি,চানাচুর,বাদাম বিক্রি করে থাকে।ওদের সাথে কথা বলুন।তাদের অন্য পন্যের পাশা[পাশি কোয়েলের সিদ্ধ ডিম রাখতে বলুন।কারন কোয়েলের ডিমের সুন্দর কারুকার্যের জন্য তা স্কুলের বাচ্চাদের বেশ জনপ্রিয়তা পাবে।তারা তাদের অবিভাবকদের ডিম সম্পর্কে জানাবে।এতে করে খুব অল্প সময়ে এলাকার মানুষ ডিম সম্পর্কে জানবে,চাহিদা বাড়বে,বিক্রি বাড়বে,আপনার খামারের পরিধি বাড়বে।

এলাকার বাজারের কিছু বড় দোকান থাকে যারা পাইকারি ডিম সেল করে।তাদের সাথে কথা বলে কোয়েলের ডিম রাখার কথা বলতে পারেন।

এছাড়া স্থানীয় বাজারের মুদিমালের দোকানে ছোট ডিমের খাঁচায় অল্প করে কাঁচা ডিম রাখতে বলুন।এতে করে মানুষ দোকানে মুরগির ডিম কিনতে এসে কোয়েলের ডিম দেখলে শখের বশে হলেও কোয়েলের ডিম কিনতে পারে।

এলাকার আশেপাশে মেলা,বা বিনোদন মূলক যেকোনো অনুষ্ঠান হলে সেখানেও নিজে বা হকার দিয়ে ডিম বিক্রি করাতে পারেন।এতে ডিম সম্পর্কে অনেক মানুষ জানবে।কারন মেলায় দূরদূরান্ত থেকে অনেক মানুষ আসে।

এছাড়া কোয়েল পাখির ডিম ও মাংসের উপকারিতা,গুনাগুন বর্ণনা করে আপনার খামারের ফোন নাম্বার সহ ছোট ছোট লিফলেট,ব্যানার, পোস্টারিং করতে পারেন আপনার এলাকার গুরুত্বপূর্ণ বাজার বা পয়েন্টে।এতে মানুষ আপনার খামার সম্পর্কে জানবে এবং এভাবে আপনি নতুন পাইকার বা কাস্টমার পেতে পারেন।


কোয়েলের ডিম পরিবহন পদ্ধতিঃ

কোয়েল পাখির ডিমের খোলস খুবই নরম হয়ে থাকে তাই খুব সাবধানে ডিম এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় পরিবহন করতে হবে।

তবে ডিম যদি ডিমের ট্রেতে করে বহন করা হয় তবে ডিম ভাঙ্গার সম্ভাবনা থাকে না।

বর্তমানে মুরগির ডিমের ট্রে এর মতই কোয়েলের ডিমের প্লাস্টিকের ট্রে কিনতে পাওয়া যায়।

নিচে কোয়েলের ডিমের প্লাস্টিকের ট্রের ছবি দেয়া হলঃ

কোয়েলের ডিম সংরক্ষণ পদ্ধতিঃ

অনেক সময় দেখা যায় ক্ষুদ্র খামারিরা বিভিন্ন কারনে ডিম বিক্রি করতে পারেন না।আবার এমন ও হয় যে খারাপ আবহাওয়ার কারনে ডিম বিক্রি হয় না।শীতের দিনে কোয়েলের ডিম স্বাভাবিক তাপমাত্রায় প্রায় ১০-১২ দিন ভাল থাকে।কিন্তু গরমের সময় ৭-৮ দিনের বেশি হলে ডিম নষ্ট হয়ে যায়।আর তাই কোয়েলের ডিম গরমের সময় সংরক্ষন করা জরুরী।

সাধারনত ৪টি পদ্ধতিতে দীর্ঘদিন ডিম সংরক্ষন করা যায়।

ফ্রিজে ডিম সংরক্ষণ।

কোল্ড স্টোরেজ/হিমাগারে সংরক্ষণ।

চুনের পানিতে ডিম সংরক্ষন।

তেলের মধ্য ভিজিয়ে সংরক্ষন।

ফ্রিজে কোয়েলের ডিম সংরক্ষণঃ

ফ্রিজের নরমালে সংরক্ষন করলে প্রায় ২০-২৫ দিন পর্যন্ত ডিম ভাল থাকে

কোল্ড স্টোরেজ/হিমাগারে সংরক্ষণঃ

বর্তমান বাজারের চাহিদা অনুযায়ী কোলের ডিম সংরক্ষণ করার প্রয়োজন পড়ে না। কিন্তু খুব বেশি প্রয়োজন মনে হলে আপনারা হিমাগার বা কোল্ড স্টোরেজ এ ডিম কয়েকমাস সংরক্ষণ করতে পারেন।

চুনের পানি পদ্ধতিঃ

এ পদ্ধতিতে ১ কেজি চুন ২০ লিটার পরিস্কার পানিতে ভাল করে মিশাতে হবে।পানিতে চুন মিশানোর ১৫-২০ মিনিট পরে দেখা যাবে যে,পাত্রের উপরিভাগে স্বচ্ছ পানি জমা হয়েছে আর পাত্রের নিচের দিকে চুনের স্তর জমা হয়েছে। তবে পাত্রের নিচে থাকা চুন,ডিম সংরক্ষনের কোনো কাজে আসবে না।

এবার পাত্রের উপরিভাগে জমে থাকা স্বচ্ছ পানি উপর থেকে তুলে নিতে হবে।এবং এই পানিতে পরিস্কার ডিম গুলা ডুবিয়ে রাখতে হবে।এই পদ্ধতিতে ডিম প্রায় ৬ মাস পর্যন্ত সংরক্ষন করা যায়।মনে রাখা জরুরি যে,যেই পাত্রে ডিম সংরক্ষন করবেন সেটা অবশ্যই মাটির বা কাঁচের পাত্র হতে হবে।

তেল প্রয়োগ পদ্ধতিঃ

যেকোনো খাবার তেলেই এই পদ্ধতিতে ডিম সংরক্ষন করা যাবে। ১ লিটার তেল দিয়ে প্রায় ১ হাজার পিস কোয়েলের ডিম সংরক্ষন করা যাবে।

ডিম সংগ্রহের পর ডিম গুলা যত দ্রুত সম্ভব পরিস্কার কাপড় দিয়ে ময়লা পরিস্কার করে নিতে হবে।তবে ডিম কিন্তু পানি দিয়ে ধুয়ে পরিস্কার করা যাবে না।শুকনো কাপড় দিয়ে মুছে মুছে পরিস্কার করতে হবে।

এরপরে ডিম গুলা তেলের মধ্যে চুবিয়ে চুবিয়ে তুলে অন্য পাত্রে সংরক্ষন করতে হবে।

এই পদ্ধতিতে ও বেশ কিছু দিন ডিম সংরক্ষন করা যায়।

বিঃদ্রঃ শেষের দুটি পদ্ধতি কোয়েলের ডিম সংরক্ষণে ব্যবহার করা খুব কষ্টকর ও সময় সাপেক্ষ্য।


গরমে কোয়েলের যত্নঃ

ঋতু ভেদে কোয়েলের যত্ন নেয়া জরুরি।কারন ঋতু বা আবহাওয়া পরিবর্তনের সাথে কোয়েলের উৎপাদন,রোগ-বালাই ও তাদের স্বাস্থ্যের পরিবর্তন হতে পারে।

প্রচন্ড গরমে কোয়েলের জন্য বিশেষ কিছু যত্ন নিতে হবে।

গরমে খামারে বৈদ্যুতিক ফ্যানের ব্যবস্থা করতে হবে।

খামারের ভেতর দিকে চালার নিচে সিলিং লাগাতে হবে।যাতে ঘরের ভিতরে রোদের তাপ সরাসরি প্রবেশ করে খামারের ভিতরের পরিবেশ উত্তপ্ত করতে না পারে।

এছাড়া খামারের চালার উপরে পাটের চট বা গাছের ডাল পালা দিয়ে টিন ঢেকে দিলে ও সূর্যের তাপ সরাসরি খামারে লাগবে না।

গরমের দিনে পাখিকে যথাসম্ভব ঠান্ডা ও পরিস্কার পানি সরবরাহ করতে হবে।

পানির সাথে গ্লুকোজ বা খাবার স্যালাইন ও ভিটামিন-সি মিশিয়ে দিতে হবে।

খামারের চারিপাশ খোলামেলা রাখতে হবে।যাতে বাতাস চলাচল করতে পারে।

দুপুরের দিকে যদি অসহনীয় তাপ থাকে তবে ঠান্ডা পানি অল্প করে পাখির গায়ে স্প্রে করে দিতে পারেন।


শীতে কোয়েলের যত্নঃ

শীতের সময় খুব সতর্কতার সাথে কোয়েলের যত্ন নিতে হবে।কারন এসময় তাদের জন্য প্রয়োজনীয় তাপমাত্রা বজায় না থাকলে পাখি মারা যেতে পারে।

শীতে কোয়েলের বিশেষ কিছু যত্ন-

প্রথমত তাদের জন্য প্রয়োজনীয় তাপ প্রদান করতে হবে।তাপমাত্রা বজায় রাখার জন্য বৈদ্যুতিক বাল্ব,ইনফ্রারেড হিট বাল্ব,কয়লার হিটার,গ্যাস ব্রুডার ব্যবহার করতে হবে।

সম্ভব হলে ঠান্ডা পানির বদলে হাল্কা কুসুম গরম পানি পান করতে দিন।

ঠান্ডা লেগে গেলে ঠান্ডার ওষুধ দিতে হবে।

খামার পর্দা দিয়ে ঢেকে রাখতে হবে।যাতে ভেতরে কুয়াশা প্রবেশ না করতে পারে। খামারের চারিদিকে পর্দা লাগানোর সিস্টেম থাকতে হবে।তবে পর্দার সিস্টেম এমন হতে হবে যেন-পর্দা দেয়ালের নিচ থেকে খামারের ভেতর থেকে রশি দিয়ে টেনে টেনে উপরের দিকে তোলা যায়। অর্থাৎ পর্দা উপর থেকে নয়;নিচ থেকে লাগাতে হবে।কারন খামারের সৃষ্ট গ্যাস হালকা বলে তা উপর দিয়ে বের হবে কিন্তু উপরে যদি পর্দা দিয়ে আটকানো থাকে তবে গ্যাস বের হতে পারে না।

রোদ উঠলে পর্দা সরিয়ে দিতে হবে যাতে খামারে সূর্যের আলো প্রবেশ করতে পারে।


কোয়েলের ডিম থেকে বাচ্চা ফুটানোর পদ্ধতিঃ

সাধারনত বানিজ্যিক কোয়েল নিজেরা ডিমে তা দিয়ে বাচ্চা ফুটায় না।কৃত্রিম পদ্ধতিতে ইনকিউবেটর মেশিনের সাহায্যে কোয়েলের ডিম থেকে বাচ্চা ফুটাতে হয়।ইনকিউবেটর মেশিনের সাহায্যে কোয়েলের ডিম থেকে বাচ্চা ফুটের বের হতে প্রায় ১৭-১৮ দিন সময় লাগে।

ইনকিউবেটর মেশিন দিয়ে বাচ্চা ফুটাতে হলে ৪ টি বিষয় কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে হয়-

তাপমাত্রা (৩৭.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস)- তাপমাত্রা ০.৫ ডিগ্রি ফারেনহাইটের বেশী ওঠানামা করানো যাবে না।

আদ্রতা (৬৫-৭৫% আপেক্ষিক আর্দ্রতা)

ভেন্টিলেশন/বায়ু চলাচল-বায়ুচলা চল করে এমন জায়গায় মেশিন টি রাখতে হবে।

টার্নিং/ ডিম ঘুরিয়ে দেয়া- প্রতি ঘণ্টায় একবার ডিম ঘুরিয়ে ডিতে হবে।

বর্তমানে দেশে ভাল মানের আধুনিক অটোমেটিক ইনকিউবেটর মেশিন পাওয়া যায়।

ইনকিউবেটর মেশিনে ২ টি অংশ থাকে।

সেটার- এই অংশে ডিম ৯৯.৫ ডিগ্রি ফারেনহাইট(F) তাপমাত্রায় ও ৮৬-৮৭ ডিগ্রি F আদ্রতায় ১৫ দিন রাখা হয়।এর পরে ডিমের খোলসে ফাটল বা পিপিং শুরু হলে ডিম হ্যাচারে স্থানান্তর করতে হবে।

হ্যাচার- এই অংশে ডিম গুলো ৯৮.৫ ডিগ্রি ফারেনহাইট তাপমাত্রা ও ৯০ ডিগ্রি ফারেনহাইট আদ্রতায় রাখতে হবে। এই সময় ডিম ঘুরানো বন্ধ রাখতে হয়। ডিমের খোলস থেকে বাচ্চা বের হবার সর্বোচ্চ ২৪-৩৬ ঘন্টার মধ্যে বাচ্চা গুলা হ্যাচার থেকে বের করে নিয়ে আসতে হবে।


ভাল হ্যাচিং রেট পেতে কিছু পরামর্শঃ

প্রথমেই মেশিনে বসানোর জন্য ডিম গুলো বাছাই করতে হবে।মশিনে বসানোর জন্য মাঝাবি আকারের ডিম সিলেক্ট করতে হবে।একেবারে ছোট এবং অস্বাভাবিক বড় আকারের ডিম গুলো বাদ দিতে হবে।

ফাটা বা ছিদ্রযুক্ত ডিম বাদ দিতে হবে।

ডিমের সাথে কোনো ময়লা থাকলে তা শুষ্ক নরম কাপড় দিয়ে পরিষ্কার করে নিতে হবে।

এরপরে ডিমগুলো ছড়িয়ে রেখে নির্ধারিত মাত্রায় টিমসেন বা ফরমালিন বা অন্যান্য জীবাণুনাশক স্প্রে করে ডিম গুলো হাল্কা শুকিয়ে নিতে হবে এবং এরপরে ডিমগুলো মেশিনের সেটার ট্রেতে বসাতে হবে।

ডিম বসানোর সময় সরু বা চিকন অংশ নিচের দিকে আর মোটা অংশ উপরের দিকে দিয়ে বসাতে হবে।

দিনরাত ২৪ ঘন্টাই বিদ্যুৎ বা জেনারেটর বা আইপিএস ব্যবস্থা থাকতে হবে।


কোয়েলের বাচ্চার ব্রুডিং ব্যবস্থাপনাঃ

কোয়েলের বাচ্চা ব্রুডিং এর জন্য প্রয়োজনীয় আসবাবপত্রঃ

চিকগার্ড

হোভার

তাপের উৎস (বৈদ্যুতিক লাইটিং/গ্যাস ব্রুডার)

তাপমাত্রা মাপার জন্য থার্মোমিটার।

ছোট পানির পাত্র যা বোতলের মুখের সাথে লাগানো যায়।

ছোট খাবার পাত্র

নিউজপেপার বা পাটের বস্তা

তুষ

ব্রুডার প্রস্তুতকরনঃ

প্রতিটি চিকগার্ড লম্বায় হবে ৬ ফুট করে এবং উচ্চতা হবে ১.৫ ফুট।এইরকম ২ টি চিকগার্ড মুড়িয়ে গোল করে বসাতে হবেএবং এই চিকগার্ডের ব্যাসার্ধ হবে ৪ ফুট।

এইরকম একটা ব্রুডারে প্রায় ১০০০ পিস কোয়েলের বাচ্চা ব্রুডিং করা যাবে।

এবার চিকগার্ডের মাঝে ৩-৫ ইঞ্চি পুরু করে তুষ বিছিয়ে দিতে হবে।

এবার তুষের উপরে নিউজপেপার বা পাটের বস্তা বিছিয়ে দিতে হবে।

এবার এই গোল ব্রুডারের উপর থেকে চিকগার্ডের উচ্চতার সমান উচ্চতায় তাপের উৎস হিসেবে হোভার ঝুলিয়ে দিতে হবে।

চিকগার্ডের সাথে তাপমাত্রা পরিমাপক থার্মোমিটার ঝুলিয়ে দিতে হবে যেন সহজেই ব্রুডারের তাপমাত্রা চোখে পড়ে।

উপর থেকে চিকগার্ড ঝুলানোর পরে বাকি খোলা অংশ পেপার দিয়ে ঢেকে দিতে হবে যেন তাপ বের হয়ে যেতে না পারে।এবং এই পেপার কয়েক ঘন্টা পর পর কিছু সময়ের জন্য সরিয়ে রাখতে হবে যেন ব্রুডারের ভিতরের গ্যাস বা বায়ু বের হয়ে যেতে পারে। এটা না করলে বাচ্চার শ্বাসকষ্ট দেখা দিতে পারে।

এরপরে বাচ্চা ব্রুডারে নিয়ে আসার কয়েক ঘন্টা আগে ব্রুডার চালু করে ব্রুডারের তাপমাত্রা ঠিক করতে হবে।

প্রথম সপ্তাহে ব্রুডারের তাপমাত্রা ৯৫ ডিগ্রি ফারেনহাইট রাখতে হবে। এরপরে প্রতি সপ্তাহে তাপমাত্রা ৫ ডিগ্রি ফারেনহাইট করে কমিয়ে আনতে হবে। এভাবে ৪র্থ সপ্তাহে তাপমাত্রা এসে দাঁড়াবে ৭৫ ডিগ্রি ফারেনহাইট।

বাচ্চা ব্রুডারে ছাড়ার পরে প্রথম ৫ থেকে ৭ দিন পেপার বা পাটের বস্তার উপরে বাচ্চা মুরগির স্টার্টার খাদ্য ছিটিয়ে দিতে হবে ও এরপরে বাচ্চা একটু বড় হলে ছোট খাবার পাত্রে খাদ্য এবং ছোট পানির পাত্র সংযুক্ত প্লাষ্টিকের বোতলে পানি দিতে হবে।

ব্রুডারে বাচ্চা ছাড়ার সময় যা যা করতে হবে

বাচ্চা পরিবহন করে খামারে নিয়ে আসার পরে বাচ্চা ব্রুডারে ছাড়ার সময় আপনাকে বিশেষ সতর্কতা মানতে হবে-

বাচ্চা এনেই তড়িঘড়ি করে ছেড়ে দিবেন না।প্রথমে বাচ্চার ঝুড়ি ব্রুডার ঘরে কয়েক মিনিট রাখুন।এতে করে বাচ্চা গুলা ব্রুডারের তাপমাত্রার সাথে নিজেদের মানিয়ে নিতে পারে।

এরপরে আস্তে আস্তে করে বাচ্চাগুলা ছাড়তে হবে।

বাচ্চা ছাড়ার পরে প্রথমে গ্লুকোজ মিশ্রিত পানি দিবেন।

পানি দেয়ার ২-৩ ঘন্টা পরে খাবার দিবেন।পানি দেয়ার আগে কখনোই খাবার দিবেন না।আগে পানি দিবেন তারপরে খাবার দিবেন।এতে করে বাচ্চার খাবার হজম করার ক্ষমতা বাড়ে।

১ দিনের বাচ্চার জন্য প্রথম ৫-৭ দিন পেপারের উপরে খাবার দিবেন।প্রতিদিন পেপার পরিবর্তন করে দিতে হবে।

এরপরে বাচ্চা বড় হলে ফ্ল্যাট ট্রে তে খাবার দিতে পারেন।

পানির পাত্রে বাচ্চা যাতে পড়ে না যায় সে জন্য মার্বেল অথবা কয়েক টুকরা পাথর খন্ড পানির পাত্রে রাখতে হবে।

কোয়েলের বাচ্চার ব্রুডিং

কোয়েলের বাচ্চার ব্রুডিং তাপমাত্রা

কোয়েলের ব্রুডিং পরিবেশের তাপমাত্রার উপর নির্ভরশীল।

বয়সতাপমাত্রা (সেলসিয়াস)তাপমাত্রা (ফারেনহাইট)১ম সপ্তাহ৩৫ ডিগ্রি৯৫ ডিগ্রি২য় সপ্তাহ৩২.২ ডিগ্রি৯০ ডিগ্রি৩য় সপ্তাহ২৯.৫ ডিগ্রি৮৫ ডিগ্রি৪র্থ সপ্তাহ২৭.৬ ডিগ্রি৮০ ডিগ্রি

সাধারনত তিন সপ্তাহের বেশি ব্রুডিং করা লাগে না।তবে শীতের দিনে ব্রুডিং চার-পাঁচ সপ্তাহ পর্যন্ত করতে হয়।

ব্রুডিং তাপমাত্রার গোপন কথা হচ্ছে যে,ব্রুডিং যত সপ্তাহই করা লাগুক না কেন।প্রথম সপ্তাহের যে তাপমাত্রা দেয়া লাগে।এরপরে প্রতি সপ্তাহে ৫ ডিগ্রি ফারেনহাইট করে কমাতে ভবে।

যেমন উপরের ছকে ৪ সপ্তাহ পর্যন্ত ব্রুডিং তাপমাত্রা দেয়া আছে।কিন্তু শীতের সময় যদি চার সপ্তাহ পর্যান্ত তাপ দেয়া লাগে তবে,৫ম সপ্তাহে এই তাপমাত্রা ৫ ডিগ্রি ফারেনহাইট কমে গিয়ে দাঁড়াবে ৭৫ ডিগ্রি ফারেনহাইট।


কোয়েল পালনের সাম্ভাব্য পুঁজি (১০০০ পাখির)

বিষয়ধরণদর টাকা১) পাখিমহিলা পাখি (৩০ দিন বয়সী)গড়ে ৩০ টাকা প্রতি পিস১০০০x৩০৩০,০০০/=2)খাদ্য (ডিম পাড়ার আগ পর্যন্ত)দৈনিক গড়ে ২০ গ্রাম করে ৩০ দিন। ১০০০ পাখির জন্য ১২ বস্তা (৫০ কেজির বস্তা)প্রতি বস্তা ২২০০ টাকা (ব্রয়লারগ্রোয়ার)১২x২২০০২৬,৪০০/=3)খাঁচালোহার তৈরি (১০০০ পাখির জন্য) খাঁচার সাথেই পানি ও খাবার পাত্র যুক্ত থাকবে।দাম খাচার ওজন ও উপাদানের ভিত্তিতে কম বেশি হতে পারে।২ টি খাঁচায় ৫০০ পিস করে পাখি। প্রতিটি খাচায় ৫ টি তাক থাকবে।৩০,০০০/=4)অন্যান্যওষুধ,ভাড়া ও অন্যান্য——-——— ৩,৬০০/= মোট=৯০,০০০/=

বিঃদ্রঃ খাঁচা রাখার জন্য যে ঘর বা ছাউনি লাগবে সেই ঘর বা ছাউনি তৈরির খরচ হিসাবের আওতার বাইরে রাখা হল।

এক হাজার কোয়েল পালনে মাসিক আয়

প্রথমে আমরা হিসাবের সুবিধার্থে কিছু বিষয় ধরে নিব

১) ডিম দেয়ার হার ৭০-৯০% (গড়ে ৮০% ধরে নিলাম)

২) ডিমের দাম ১.৬ – ২.০ টাকা (গড়ে ১.৮ টাকা)

৩) লেয়ার খাবারের দাম(৫০কেজি) প্রতি বস্তা ১৮০০ টাকা

অর্থ্যাত প্রতি কেজির দাম=৩৬ টাকা

৪) প্রতিটি কোয়েল খাবার খাবে ২৫ গ্রাম।

১০০০ কোয়েলের মাসিক ব্যয়ঃ

১) দৈনিক খাবার= ১০০০x২৫=২৫০০০ গ্রাম=২৫ কেজি

মাসিক খাবার খরচ=২৫x৩০ কেজি=৭৫০কেজিx৩৬ টাকা=২৭,০০০ টাকা

২)ওষুধ(ভিটামিন,ক্যালসিয়াম,জিংক,এন্টিবায়োটিক্ও অন্যান্য)=১,০০০ টাকা

৩)বিদ্যুৎ বিল =৫০০ টাকা

৪)লিটার(গাছের গুড়ি,ধানের তুষ) =৩০০ টাকা

৫)কর্মচারী বেতন- =৫,০০০ টাকা

৬) অন্যান্য =২০০ টাকা

(কর্মচারীর বেতন ১০,০০০ টাকা কিন্তু একজন লোক কমপক্ষে ২০০০ পিস কোয়েল দেখাশুনা করতে পারে।তাই ১০০০ কোয়েলের হিসাবের জন্য বেতন ৫,০০০ টাকা ধরা হয়েছে)

মোট খরচ=৩৪,০০০ টাকা

১০০০ কোয়েল থেকে মাসিক আয়ঃ

দৈনিক ডিম পাওয়া যাবে= ৮০০ টি

প্রতিটি ১.৮ টাকা গড়ে

দৈনিক আয়=৮০০x১.৮=১,৪৪০ টাকা

তাহলে,মাসিক আয়= ১,৪৪০x৩০=৪৩,২০০ টাকা

১০০০ কোয়েল থেকে মাসিক লাভঃ

মোটআয় = ৪৩,২০০ টাকা

মোট খরচ= ৩৪,০০০ টাকা

**মাসিকলাভ = ৪৩,২০০ –৩৪,০০০টাকা

= ৯,২০০ টাকা

এখন যদি আপনি কর্মচারী না রেখে নিজে একটা কষ্ট করে খামারের দেখাশুনা করেন তবে বেচে যাবে আরো ৫০০০ টাকা।

**তাহলে লাভ হবে = ৯,২০০+৫,০০০=১৪,২০০ টাকা।

আর ডিমের দাম যদি ২টাকা পিস হয় তবে আরো অতিরিক্ত লাভ হবে ৪,৮০০টাকা।

তাহলেটোটাললাভহবে= ১৪,২০০+৪,৮০০=১৯,০০০টাকা।

এভাবে আপনি ২০০০ কোয়েল পালন করলে মাসে কমপক্ষে আয় করতে পারবেন ৩০ হাজারের বেশি টাকা।

(লাভের পরিমান সময়ের সাথে বাজার দরের উপরে নির্ভর করবে।এখানে শুধু আনুমানিক হিসাব দেখানো হয়েছে।)

বিঃদ্রঃ ঢাকার পাইকারি বাজারে গরমের সময় প্রতি শত ডিমের দাম ১৫০ টাকা ও হতে পারে।তাই আপনাকে নিজের স্থানীয় বাজারে ডিম বিক্রির ব্যবস্থা করতে হবে।তা না হলে লাভ থাকবে না।লস হবার সম্ভাবনা থাকবে।

তাই নিজের এলাকার চাহিদা অনুযায়ী উৎপাদন করুন। কিন্তু শীতের সময় আবার ঢাকার পাইকারি বাজারেই ডিমের দাম ২ টাকা পর্যন্ত হয়।তাইশীতের বাজার ধরার জন্য শীতের ৩ মাস আগেই পাখি খামারের তুলতে পারেন যদি আপনি সিজনাল ভাবে ব্যবসা করতে চান।


কোয়েল খামারের বায়োসিকিউরিটি বা জৈবনিরাপত্তাঃ

যেকোনো খামারের সাফল্যের পিছনে বায়োসিকিউরিটি বা জৈব-নিরাপত্তা বিশেষ ভূমিকা রাখে।কারন জৈব নিরাপত্তা মেনে চললে খামারে রোগ-বালাই হওয়ার প্রবণতা কম থাকে।তাই সঠিকভাবে খামারের বায়োসিকিউরিটি বজায় রাখতে পারলে খামার করে সফল হওয়া খুবই সম্ভব।

খামার প্রস্তুত করা থেকে শুরু করে বাচ্চা সংগ্রহ,বাচ্চা লালন-পালন এবং উৎপাদন ও বিক্রয় পর্যন্ত সকল ক্ষেত্রে বায়োসিকিউরিটি মেনে চলতে হবে।

আসুন কোয়েল খামারের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত সকল জৈব-নিরাপত্তা গুলো জেনে নিই-

ঘর প্রস্তুতের ক্ষেত্রেঃ

খামার ঘরটি যথাসম্ভব বসতবাড়ি থেকে দূরে হওয়া উচিত। তবে বাসার ছাদে করলে ও সমস্যা নেই।

একটি খামার থেকে অন্য একটি খামারের দূরত্ব কমপক্ষে ১০০ মিটার হওয়া উচিত।

খামার ঘরটি অবশ্যই পূর্ব-পশ্চিম বরাবর লম্বা হতে হবে।

ঘরের উত্তর ও দক্ষিণ দিক খোলা রাখতে হবে।

খামারের আশে-পাশে কোনো জলাশয় বা ডোবা থাকা উচিত নয়।

ঘরে পর্যাপ্ত আলো-বাতাস প্রবেশের ব্যবস্থা থাকা।

খামারে প্রবেশের পথে (দরজার সামনে) একটি ফুটবাথ তৈরি করা।ফুটবাথ হচ্ছে খামারের প্রবেশ পথে একটি ছোট বাথ ট্যাব বা কুয়ার মত পাকা করে তৈরি করা।এবং সেখানে সবসময় জীবাণুনাশক মিশ্রিত পানি পূর্ণ থাকবে।যখন কেউ খামারে প্রবেশ করবে তখন যেন সে তার পা এই পানিতে ডুবিয়ে তারপরে খামারে প্রবেশ করে।এতে খামারি বা দর্শণার্থীর পায়ের সাহায্যে খামারে কোনো জীবাণু প্রবেশ করতে পারবে না।

দর্শণার্থী প্রবেশের ক্ষেত্রেঃ

খামারে বিনা প্রয়োজনে বাইরের কাউকে প্রবেশ করতে দেয়া উচিত না।এতে যেকোনো সময় জীবাণুর আক্রমন হতে পারে।অনেক সময় ভদ্রতার খাতিরে আমরা বন্ধু-বান্ধব বা আত্মীয়-স্বজনদের খামারে ঢুকতে দেই।কিন্তু এটা খামারের জৈব-নিরাপত্তার ক্ষেত্রে করা উচিত নয়।

যদি বিশেষ কাউকে ঢুকতে দিতে হয় তবে ঢোকার আগে অবশ্যই তাকে ভালভাবে জীবাণু নাশক স্প্রে করে নিতে হবে।ফুটবাথে পা ডুবিয়ে তারপরে খামারে ঢুকাতে হবে।

বেশি ভাল হয় যদি খামারে কাজ করার জন্য আলাদা পোশাক থাকে।যখন কেউ খামারে প্রবেশ করবে তখন সেই পোশাক পড়ে প্রবেশ করবে।এবং এই পোশাক গুলা নিয়মিত জীবানুমুক্ত রাখতে হবে।


বাচ্চা ছাড়ার আগে ঘর জীবানুমুক্তকরণঃ

খামারে বাচ্চা আনার আগে খামার টি ভালকরে ডিটারজেন্ট বা জীবানুনাশক মিশ্রিত পানি দিয়ে ধুয়ে ভাল করে শুকিয়ে তারপরে বাচ্চা আনতে হবে।

ঘরের মেঝেতে ব্যবহৃত লিটারের উপরে জীবাণুনাশক স্প্রে করে নিতে হবে।

খাবার ও পানির পাত্র জীবানুমুক্তকরণঃ

বাচ্চা আনার আগেই খাবার ও পানির পাত্র গুলা জীবানুনাশক মিশ্রিত পানি দিয়ে ধুয়ে নিতে হবে।

এরপরে পাত্র গুলা ভাল করে রোদে শুকিয়ে নিতে হবে।


বাচ্চা পরিবহনের ক্ষেত্রেঃ

বাচ্চা পরিবহন করার জন্য সে খাঁচা ব্যবহার করবেন সেগুলা আগে থেকেই ভাল করে জীবাণুনাশক মিশ্রিত পানি দিয়ে ধুয়ে তারপরে রোদে শুকিয়ে নিতে হবে।

সম্ভব হলে যে পরিবহনে সে স্থানে করে নিয়ে আসবেন সেখানে ও জীবাণুনাশক স্প্রে করে নিন।

সারাবছর জুড়েঃ

প্রতিদিন খামারের খাবার ও পানির পাত্র পরিস্কার করতে হবে।

পাত্রের তলায় পড়ে থাকা ময়লাযুক্ত খাবার সরিয়ে নিতে হবে।

পরিস্কার ও জিবাণুমুক্ত পানি সরবারাহ করতে হবে।

প্রতি ২-৩ দিন অন্তর অন্তর খামারের চারিপাশে জীবাণুনাশক স্প্রে করতে হবে।

যেসকল জীবাণুনাশক গুলা পাখির ক্ষতি করে না এমন জীবাণুনাশক দিয়ে খামারের ভিতরে ও মাঝে মাঝে স্প্রে করা ভাল।

প্রতি সপ্তাহে প্রয়োজনে একাধিক বার লিটারের উপরের ময়লা পরিস্কার করা উচিত।

খাঁচার ট্রে’র ময়লা প্রতিদিন পরিষ্কার করা উচিৎ।

এছাড়া খামারে ব্যবহৃত সকল যন্ত্রপাতি নিয়মিত জীবানুমুক্ত রাখা উচিত।

বিঃদ্রঃ খামারে কোনো কারনে কোনো পাখি মারা গেলে তা এদিক সেদিকে না ফেলে দিয়ে একটা নির্দিষ্ট গর্ত করে সেখানে মাটি চাপা দিন।এতে ওই মৃত পাখি থেকে রোগ-জীবাণু ছড়াতে পারবে না। এই বিষয় টা একটু গুরুত্ব সহকারে দেখা উচিত।


কোয়েলের রোগ ও চিকিৎসাঃ

কোয়েল প্রাকৃতিকভাবেই অনেক বেশি রোগ প্রতিরোধক্ষম।সাধারনত কোয়েলের তেমন কোনো রোগ বালাই হয় না।আর এটাই কোয়েল পালনের সবচেয়ে বড় সুবিধা।

যদিও কোয়েলের তেমন রোগ হওয়ার সম্ভাবনা নেই তবুও আমি এই পর্বে কোয়েলের হওয়ার সম্ভাবনা আছে এমন কিছু রোগের নাম,কারণ,লক্ষণ,প্রতিরোধ ও চিকিৎসার কথা উল্লেখ করার চেষ্টা করেছি। কেননা, কোয়েলের রোগ হোক বা না হোক,আপনাদের জেনে রাখা উচিত।

সাধারণ রোগ সমূহ

কোয়েল ডিজিজ/Ulcerative Enteritis

ক্লোমনালী প্রদাহ/Bronchitis

অ্যাসপারজিলোসিস বা ব্রুডার নিউমোনিয়া

কলিসেপ্টিসেমিয়া

রক্ত আমাশয়/কক্সিডিউসিস

রাণীক্ষেত

এভিয়ান কলেরা

কোয়েল পক্স

মারেক্স রোগ

লিম্ফয়েড লিউকোসিস

কৃমির আক্রমণ

কার্ল টো প্যারালাইসিস

ঠোকরা-ঠুকরি বা ক্যানিবালিজম

ডিম আটকে যাওয়া৷

উল্লেক্ষিত রোগ গুলোর মধ্যে কোয়েল ডিজিজ,রক্ত আমাশয়/কক্সিডিউসিস , কৃমির আক্রমণ,ক্যানিবালিজম বা ঠোকড়া-ঠুকড়ি এবং ডিম আটকে যাওয়া সমস্যা বেশি দেখা দেয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

১.কোয়েল ডিজিজ/Ulcerative Enteritis

ক্ষতসৃষ্টিকারী অন্ত্রপ্রদাহ রোগটি ”কোয়েল” (Quail disease) নামেও পরিচিত৷ কোয়েলের রোগব্যাধির মধ্যে এটিই সবচেয়ে মারাত্মক৷ আক্রান্ত কোয়েলের ১০০% ও মারা যেতে পারে৷ সাধারণত লিটারে পালিত কোয়েলে এ রোগ বেশী দেখা যায়৷

কারণঃ ক্লোস্ট্রিডিয়াম কলিনাম(Clostridium colinum) নামক ব্যাকটেরিয়া দ্বারা এই রোগ হয়ে থাকে।

রোগের বিস্তারঃ সাধারণত দূষিত খাদ্যদ্রব্য খাওয়ার মাধ্যমে বাচ্চা কোয়েল এ রোগে আক্রান্ত হয়৷ আক্রান্ত ঝাঁক থেকে সুস্থ ঝাঁকে এ রোগ দ্রুত ছড়িয়ে পড়তে সক্ষম৷

লক্ষণঃ

তীব্র ও দীর্ঘস্থায়ী দু’ধরণের রোগই হতে পারে৷

মারাত্মকভাবে আক্রান্ত কোয়েল অনেক সময় কোন লক্ষণ প্রকাশের পূর্বেই মারা যেতে পারে৷

মৃদুভাবে আক্রান্ত কোয়েলে অবসাদ দেখা যায়৷

চোখ আংশিকভাবে বন্ধ করে রাখে এবং পাখা ঝুলে পড়ে৷

রক্তসহ পাতলা পায়খানা হয় এবং পাখির মৃত্যু ঘটে৷

দীর্ঘস্থায়ী রোগের ক্ষেত্রে পাখি মাস খানেক রোগে ভুগে দুর্বল হয়ে মারা যায়৷

ময়না তদন্তে (Post Mortem) অন্ত্র ও সিকান্ত্রে (Caeca) বোতাম আকৃতির মারাত্মক ক্ষত বা আলসার দেখা যায়৷

চিকিৎসাঃ

চিকিৎসার জন্য ভেটেরিনারি সার্জনের পরামর্শ অনুযায়ী নির্দেশিত মাত্রায় ব্যাসিট্র্যাসিন (Bacitracin), স্ট্রেপটোমাইসিন (Streptomycin), ক্লোরোমাইসেটিন (Chloromycetin) বা টেট্রাসাইক্লিন (Tetracycline) জাতীয় ওষুধব্যবহার করা যায়৷

প্রতিরোধঃ ক্লোরোমাইসেটিন (Chloromycetin)- ৫০০ গ্রাম/টন খাদ্যে। অথবা ব্যাসিট্র্যাসিন (Bacitracin)- ৫০ থেকে ১০০ গ্রাম/খাদ্য সাথে মিশিয়ে দিতে হবে।

২) ক্লোমনালী প্রদাহ (Bronchitis) :

কোয়েলের ক্লোমনালী প্রদাহ একটি তীব্র প্রকৃতির প্রদাহজনিত রোগ৷ রোগটি তিন সপ্তাহ পর্যন্ত স্থায়ী হতে পারে৷ সব বয়সের কোয়েল এতে আক্রান্ত হলেও বাচ্চা কোয়েলের ক্ষেত্রে ৮০% পর্যন্ত মৃত্যু ঘটতে পারে৷

কারণঃ করোনা ভাইরাস (Corona virus) ভাইরাসের আক্রমণে কোয়েল এ রোগে আক্রান্ত হয়৷

লক্ষণঃ

আক্রান্ত কোয়েলে হাঁচি, কাশি ও অস্বাভাবিক শ্বাসের শব্দ লক্ষ্য করা যায়৷

কোন কোন সময় চোখ দিয়ে পানি পড়া এবং কনজাংটিভাইটিসও (Conjunctivitis) দেখা যায়৷

স্নায়বিক উপসর্গ দেখা যেতে পারে৷

চিকিৎসাঃ

ভাইরাসঘটিত রোগ বিধায় এর কোন চিকিৎসা নেই৷ তবে আক্রান্ত কোয়েল চিহ্নিত করে সঙ্গে সঙ্গে বাকিগুলোর কাছ থেকে পৃথক করে সরিয়ে ফেলতে হবে৷ ব্যাকটেরিয়াজনিত মাধ্যমিক সংক্রমণ (Secondary infection) থেকে এদের রক্ষার জন্য অ্যান্টিবায়োটিক যেমন টেট্রাসাইক্লিন ব্যবহার করা যেতে পারে৷পাশাপাশি ইলেকট্রোলাইট যেমন ইলেকট্রমিন ব্যবহার করতে হবে।

প্রতিরোধঃ পাখির ঝাঁকে (Flock) গাদাগাদি অবস্থা পরিহার করে সেখানে পর্যাপ্ত বায়ু চলাচল এবং খাদ্য ও পানির ব্যবস্থা করতে হবে৷

৩) অ্যাস্পারজিলোসিস বা ব্রুডার নিউমোনিয়া (Brooder pneumonia) :

প্রধাণত ব্রুডিং পর্বের বাচ্চা কোয়েল আক্রান্ত হয়৷ তাই এই

রোগকে ব্রুডার নিউমোনিয়া বলা হয়৷

কারণঃ বাচ্চা মুরগীতে ব্রুডার নিউমোনিয়া সৃষ্টিকারী ”অ্যাসপারজিলাস ফিউমিগেটাস (Aspergillus fumigtus) নামক ছত্রাকের স্পোর এই রোগের কারন৷

রোগের বিস্তারঃ

স্পোর দিয়ে দূষিত খাদ্য বা লিটার সামগ্রীর সংস্পর্শে অথবা নিঃশ্বাসের মাধ্যমে স্পোর গ্রহণে বাচ্চা কোয়েল এই রোগে আক্রান্ত হয়৷

লক্ষণঃ

তীব্র প্রকৃতির রোগে ক্ষুধামন্দা, পিপাসা বৃদ্ধি, জ্বর ও শ্বাসকষ্ট দেখা দেয়৷

বাচ্চা শুকিয়ে যায় ও দুর্বল হয়ে পড়ে৷

শ্বাসকষ্টের কারনে বাচ্চা মুখ হা করে ঘাড় ও মাথা উপরের দিকে টান করে শ্বাস গ্রহণ করে৷

শ্বাসপ্রশ্বাসের সময় ঘড়ঘড় শব্দ হয়৷

আক্রান্ত বাচ্চার চোখের পাতা ফুলে যায়৷ বয়স্ক বাচ্চার কর্ণিয়া (Cornea) –তে আলসার বা ঘা দেখা দিতে পারে৷

অতি তীব্র প্রকৃতির রোগের ক্ষেত্রে অনেক সময় কোনো বৈশিষ্টপূর্ণ উপসর্গ ছাড়াই বাচ্চা মারা যেতে পারে৷

চিকিৎসাঃ

রোগাক্রান্ত পাখিকে ভেটেরিনারি সার্জনের পরামর্শ অনুযায়ী খাদ্য বা পানির সাথে ছত্রাকনাশক ঔষধ মিশিয়ে খাওয়ানোর যায়, কপার সালফেট ১:২০০০ (০.২%) সলুশন খাবার পানিতে মিশিয়ে দুই সপ্তাহ পান করালে বাচ্চা তাড়াতাড়ি সেরে উঠে৷

প্রতিরোধঃ ঘরের আর্দ্রতা কমিয়ে ও প্রতি কেজি খাদ্যে দুই গ্রাম মাত্রায় ক্যালসিয়াম প্রোপিওনেট (Calcium Propionate) মিশিয়ে খেতে দেয়া যেতে পারে৷ তাছাড়া ঘরের লিটার সবসময় শুকনো রাখতে হবে এবং ব্রুডার এলাকার লিটার নির্দিষ্ট সময় পরপর উল্টেপাল্টে দিতে হবে৷ জমাট বাঁধা, ভিজা ও ছত্রাকযুক্ত লিটার ফেলে দিতে হবে৷


Powered by Blogger.