Header Ads

Header ADS

অসাধারণ সরিষা ক্ষেতের দৃশ্য বিলের নাম চলনবিল

চলন বিলঃ বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় বিলের নাম চলনবিল। ৩টি জেলা জুড়ে এর বিস্তৃতি। রাজশাহী বিভাগের চারটি জেলা, আটিটি উপজেলা, ৬০টি ইউনিয়ন, ১৬০০ গ্রাম এবং ১৪টি নদী নিয়ে এর বিস্তৃতি। 
এছাড়া রয়েছে ছোট বড় অনেক জলাশয়। নাটোর, সিরাজগঞ্জ ও পাবনা জেলার বিস্তৃত অংশ জুড়ে যে জলভূমি, বর্ষা এবং বর্ষা পরবর্তী সময়ে দেখা যায় সেটাই বিখ্যাত চলনবিল। শুকনা মৌসুমে এসব বিলে জল থাকে না। তখন চাষাবাদ চলে বিলের জমিনে। তবে বর্ষায় কানায় কানায় পানিতে পরিপূর্ণ হয়ে রূপের পসরা সাজিয়ে বসে। 

জুলাই থেকে অক্টোবর পর্যন্ত চলনবিল ভ্রমণের উপযুক্ত সময়। ডিসেম্বরের শেষের দিকে সরিষার ক্ষেত ভ্রমণের উপযুক্ত সময়।এই সময় যতদূর আপনার চোখ যাবে শুধু সরিষার খেত আর সরিষার ক্ষেত চখে পরবে।সরিষার খেত দেখার পরিবেশটা অসাধারণ দেখতে। 

ব্রহ্মপুত্র নদ যখন তার প্রবাহপথ পরিবর্তন করে বর্তমান যমুনায় রূপ নেয়, সে সময়েই চলনবিলের সৃষ্টি। গঠিত হওয়ার সময় চলনবিলের আয়তন ছিল প্রায় ১ হাজার ৮৮ বর্গকিলোমিটার। বর্তমানে এর আয়তন অনেক কমে এসেছে।বর্তমানে চলনবিল অনেকখানি হ্রাস পেয়ে আয়তন দাঁড়িয়েছে ১১৫০ র্গকিলেমিটারে। সংকুচিত হওয়ার পেছনে রয়েছে অনেক কারণ। বর্ষা মৌসুমে বিলে পলি পড়া (২২২.৫ মিলিয়ন ঘনফুট), অপরিকল্পিত বসতবাড়ি স্থাপন, জাতীয় প্রয়োজনে সিরাজগঞ্জের হাটিকুমরুল থেকে নাটোরের বনপাড়া পর্যন্ত প্রায় ৫৫ কিলোমিটারের মহাসড়ক নির্মাণ উল্লেখযোগ্য। 

আসলে চলনবিল অনেকগুলো ছোট ছোট বিলের সমষ্টি। বর্ষায় এই বিলগুলোতে জলপ্রবাহ বেড়ে একসঙ্গে বিশাল এক বিলের সৃষ্টি হয়। চলনবিলের সবচেয়ে বড় অংশ পড়েছে নাটোরে। নাটোর জেলার সিংড়া উপজেলায় রয়েছে চলনবিলের বড় একটি অংশ। এছাড়া সিরাজগঞ্জের হাটিকুমড়ুল থেকে বনপাড়া পর্যন্ত দীর্ঘ সড়ক তৈরি হয়েছে চলনবিলের বুকেই। সিরাজগঞ্জ জেলার রায়গঞ্জ ও তাড়াশ উপজেলার বিশাল অংশ জুড়ে রয়েছে চলনবিলের অংশ বিশেষ।

এ অঞ্চলের মানুষের অভিমত, চলনবিল হচ্ছে তাদের শস্যখনি, বাস্তবেও তাই। এখানকার মাটি উর্বর। বিল শুকিয়ে গেলে উর্বর মাটিতে কৃষকরা ধানের চারা রোপণ করেই উল্লাসে ফেটে পড়েন। তারা জানেন স্বল্প ব্যয়ে তাদের গোলা ভরে যাবে। শুধু তাই নয়, বর্ষার শেষ নাগাদ চলে এখানে মাছ ধরার মহোৎসব। সেই হিসেবে চলনবিল মৎস্যখনিও বটে। এখানে পাওয়া যায় দেশি পুঁটি, গজার, বোয়াল, শৈল, টাকি, টেংরা, পাতাসী, খলসা, বাইন, কাঁতলা, চিতল, চেলা, আইকর, শিংসহ নানান ধরণের দেশি মাছ। এই বিপুল মাছের ভাণ্ডারে আছে প্রচুর কাঁকড়া। 

চলনবিলে বেড়ানোর জন্য স্থানীয় নৌকা পাওয়া যাবে ভাড়ায়। সারাদিনের জন্য ভালো মানের একটি নৌকার ভাড়া পড়বে ৫শ’ টাকা থেকে ৬শ’ টাকা। এছাড়া ইঞ্জিন নৌকা মিলবে ১ হাজার টাকা থেকে ২ হাজার টাকায়। সাঁতার না জানলে অবশ্যই লাইফ জ্যাকেট সঙ্গে নেবেন। 

এই সুযোগে দেখে নিতে পারেন চলনবিল জাদুঘরটিও। গুরুদাসপুর উপজেলার খুবজিপুর গ্রামে এ জাদুঘর। স্থানীয় শিক্ষক আব্দুল হামিদ ব্যক্তিগত প্রচেষ্টায় নিজ বাড়িতে ১৯৭৮ সালে গড়ে তুলেছেন ব্যতিক্রমী এ সংগ্রশালা। চলনবিলে প্রাপ্ত নানান নিদর্শন, মাছ ধরার বিভিন্ন সরঞ্জাম ছাড়াও এখানে আছে অনেক দুর্লভ সংগ্রহ। নাটোর থেকে বাসে গুরুদাসপুর উপজেলায় এসে সেখান থেকে নদী পার হয়ে রিকশায় আসা যাবে খুবজিপুর গ্রামের এই জাদুঘরে।
Powered by Blogger.